
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবিতে আজ বুধবারও লোকসভার দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতবি হয়ে গেল। ঘুষকাণ্ড ছাড়াও লোকসভা ও রাজ্যসভায় মণিপুর সংকট, সম্ভলের হিংসাসহ যতগুলো মুলতবি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল, একটিও গ্রাহ্য না হওয়ায় বিরোধীরা সভার কাজ চালাতে বাধা দেন। ফলে দুই কক্ষের অধিবেশন সারা দিনের মতো মুলতবি করে দেওয়া হয়। শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম তিন দিনই সংসদের দুই কক্ষের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হলো।
আদানি প্রসঙ্গ নিয়ে এর আগেও বিরোধী নেতারা সংসদে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু কোনো কক্ষেই সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। হিন্ডেনবার্গ প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভারতের শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’র চেয়ারম্যান মাধবী পুরী বুচকে সংসদীয় কমিটিতে হাজিরও করানো যায়নি। শুধু তাই নয়, সংসদের দুই কক্ষের কার্যবিবরণী থেকে ‘আদানি’ শব্দটিও বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্তৃপক্ষ গৌতম আদানি, তাঁর ভাতিজা ও আদানি গ্রিনের নির্বাহী পরিচালক সাগর আদানি এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনীত এস জৈনকে ঘুষ ও বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে। অভিযোগে বলা হয়, ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি পেতে আদানি গ্রুপ ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছে।
সংসদে বিরোধী দল কংগ্রেস দাবি করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপি আদানির বিরুদ্ধে তদন্ত আটকে দিয়ে তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংসদ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘গৌতম আদানিকে গ্রেপ্তার করা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকার তাঁকে রক্ষা করতে চাইছে।’
তবে রাহুল গান্ধীর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। বিজেপির মুখপাত্র গোপাল কৃষ্ণ আগরওয়াল বলেন, ‘আদানিকে রক্ষা করার কোনো কারণ নেই। আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলবে।’
বুধবার আদানি গ্রিন এনার্জি কর্তৃপক্ষ জানায়, গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) শুধু আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এর ফলে আদানি গ্রুপের জরিমানা হবে। দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়নি।
মার্কিন অভিযোগের পর আদানি গ্রুপের বিভিন্ন শেয়ারের ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়। বিশেষ করে আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি পাওয়ারের শেয়ারগুলো বড় ধরনের পতনের মুখোমুখি হয়। এক দিনে প্রায় ১ হাজার ২৩০ কোটি ডলারের মূলধন হারায় প্রতিষ্ঠানটি।
তবে বুধবার প্রায় ৯০০ কোটি ডলার পুনরুদ্ধার করেছে আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত ১০টি কোম্পানি।
এদিকে মার্কিন অভিযোগের পর ফরাসি তেল কোম্পানি টোটাল এনার্জিস জানিয়েছে, তারা আদানি গ্রুপে আর কোনো বিনিয়োগ করবে না। এই প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রিনের ২০ শতাংশ অংশীদার ছিল।
এ ছাড়া কেনিয়া আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি বাতিল করেছে। এই চুক্তি হলে আদানি গ্রুপ কেনিয়ার প্রধান বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ পেত।
আদানি গোষ্ঠীর পক্ষে আজ এক বিবৃতিতে এমন দাবি জানিয়ে মুকুল বলেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগই ওঠেনি। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ‘বিভ্রান্তিকর’। আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছে, এ বিষয়ে এই মামলার বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবে।