
অনাস্থার পুঁজিবাজারে দরপতনের মিছিল আরও লম্বা হচ্ছে। কিছুতেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা মিলছে না। নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কোনো বার্তাও। আগের দিন ৩ শতাংশ পতনের পর গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে আরও দেড় শতাংশের কাছাকাছি। একদিনেই এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন কমেছে আরও সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। লেনদেন সামান্য বাড়লেও দিনভর বিক্রয়চাপে যতগুলো সিকিউরিটিজের দর বেড়েছে, তার দ্বিগুণ দর হারিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাজারের পতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু শেয়ার কেনার ক্রেতা একদমই কম। অনেক বিনিয়োগকারী তাদের বিও হিসাব বন্ধ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। অনেকেই আবার সাইডলাইনে থেকে মূলধন হাতে নিয়ে বাজার পর্যাবেক্ষণ করছে। তাছাড়া ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে অনেককে। এতে প্রতিনিয়ত বিক্রয় চাপে দরপতনের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশেকুর রহমান বলেন, ‘অবশ্যই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ আগের সমস্যাগুলো আছে। তবে এখন প্যানিক সেল এবং যারা ঋণ নিয়ে শেয়ার ক্রয় করেছিলেন, তাদেরকে ফোর্সড সেলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বাজারে ট্রাস্ট (আস্থা) বড় ইস্যু। গত কয়েক দিন ধরে ভালো শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা আস্থা থেকে অনেকখানি দূরে চলে গেছেন। এখন তারা সব শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি যতটুকু সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স গতকাল একদিনেই আরও ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ৬৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৮৯৯ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আগের দিন সূচকটি ১৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে নেমেছিল। সূচকটির গতকালের অবস্থান ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন। ওইদিন ডিএসইএক্স সূচক ৪ হাজার ৮৬৭ পয়েন্টে নেমেছিল। এক্সচেঞ্জটির অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের দিন লেনদেন শেষে যা ১ হাজার ১০৮ পয়েন্টে নেমেছিল। আর বাছাইকৃত ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএস৩০ দিনের ব্যবধানে ২৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের দিন যা ছিল ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে।
ঢাকার এ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে গতকাল সবগুলোর লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০৫টির দর বেড়েছে। বিপরীতে ২৪৬টিই দর হারিয়েছে। আর ৪৬টির দর এদিন অপরিবর্তিত ছিল। এক্সচেঞ্জটির লেনদেনের পরিমান এদিন সামান্য বেড়ে ৩৫৭ কোটি ২৫ লাখ হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন ডিএসইর বাজার মূলধন একদিনেই পৌনে ১০ হাজার কোটি টাকা কমার পর গতকাল আরও ৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা কমেছে।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল সবগুলো সূচক কমেছে। এর মধ্যে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৮২১ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এক্সচেঞ্জটিতে এদিন ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫২টির, কমেছে ১২৬টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৪টির।
এদিকে ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া বিনিয়োগকারীরা আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালও মতিঝিলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মতিঝিলে ডিএসইর পুরাতন ভবনের সামনে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবিতে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে জড়ো হন একদল বিনিয়োগকারী। আর দুপুর ২টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে মানববন্ধন করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আরেকটি গ্রুপ। উভয় মানববন্ধন থেকেই বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের অর্থ সম্পাদক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক দরপতন অভ্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এখন বিনিয়োগকারীদের একটাই দাবি, বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের পদত্যাগ।’