
মনিরুজ্জামান মনির :
ভুক্তভোগী নাফিছা জান্নাত আনজুমের (১৫) নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারে গ্রেফতার আসামি, উদ্ধার হলো বোরকা-ব্যাগসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত।
১৬ জুন ২০২৫ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় স্কুলছাত্রী নাফিছা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যার মর্মান্তিক ঘটনায় পুলিশের দ্রুত তদন্তে ধরা পড়েছে ঘাতক। ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী মো. জুনেল মিয়া (৩৯) কে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে নাফিছার ব্যবহৃত বোরকা, স্কুলব্যাগ, বই ও জুতা।
গত ১২ জুন সকাল ৭টায় কুলাউড়ার সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় নাফিছা। পরিবারের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। দুই দিন পর, ১৪ জুন বিকালে, বাড়ির পাশের ছড়ার পাশ থেকে দূর্গন্ধ ভেসে আসায় নাফিছার ভাই ও মামা আবিষ্কার করেন তার অর্ধগলিত মরদেহ। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায় এবং হত্যা মামলা রুজু করে।
মামলার জটিলতা উন্মোচনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমল হোসেন ও কুলাউড়া থানার অফিসার-ইন-চার্জ গোলাম আপছারের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ টিম তল্লাশি চালায়। এসময় ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী ঝোপ থেকে নাফিছার স্কুলব্যাগ, বই ও জুতা উদ্ধার হয়।
স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণে সন্দেহভাজন জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। তার মোবাইল থেকে পর্নোগ্রাফি ব্রাউজিংয়ের ইতিহাস ও আচরণগত অসঙ্গতি তদন্তকারীদের সন্দেহ বাড়ায়। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ১২টার দিকে সে হত্যার কথা স্বীকার করে।
জুনেল মিয়া জানায়, নাফিছা প্রায়ই তার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করত। ১২ জুন সকাল ১০:৩০টার দিকে প্রাইভেট থেকে ফেরার পথে সে নাফিছার পিছু নেয়। নাফিছা এড়িয়ে যেতে চাইলে জুনেল তাকে জড়িয়ে ধরে এবং চিৎকার করায় গলায় চাপ দেয়। অচেতন নাফিছাকে ছড়ার পাড়ের ঝোপে ফেলে রেখে তার ব্যাগ ও জুতা ঝোপের পাশে এবং বোরকা কিরিম শাহ মাজারের কবরস্থানে ফেলে দেয়।
আসামির তথ্যানুযায়ী, রবিবার দিবাগত রাতে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে নাফিছার বোরকা উদ্ধার করা হয়।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম (সেবা) সাংবাদিকদের এ তদন্তের বিস্তারিত জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নোবেল চাকমা, পিপিএম, তদন্ত কর্মকর্তারা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ ।
নাফিছার মৃত্যু স্থানীয় সমাজে আতঙ্ক ও শোকের ছায়া ফেলেছে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ ও প্রযুক্তিগত তদন্ত এই নৃশংস হত্যার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।