
গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে
— সালাউদ্দিন আহমেদ
👇
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। সেই আওয়াজ আমরা উঠাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগের এই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে বিচার দাবি করছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে রাজপথে কতদিন পুলিশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবেন? আপনারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবেন না কিন্তু কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আমরা বলেছিলাম, সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক আদালতের আইন সংশোধন করার দাবি জানিয়েছিল জনগণ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তী সময়ে কেবিনেটে তা বাতিল করা হয়। একদিকে বলবেন আওয়ামী লীগ রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক, আবার বিচার করবেন না। রাজপথে পুলিশ দিয়ে বাধা দেবেন, এতো স্ববিরোধিতা ঠিক নয়।
তিনি জানান, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিকভাবে বিচারের দাবি জানায় বিএনপি। নিশিরাতের বিচারকদের বহাল রেখে বিচারবিভাগকে চূড়ান্তভাবে স্বাধীন করা যাবে কিনা বা তাদের বহাল রাখা উচিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন।
বুধবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে শেখ হাসিনার দোসররা আছে, তাদের বহাল রেখে অন্তর্বর্তী সরকার বেশি দূর এগোতে পারবে না। উচ্চ আদালত থেকে অধস্তন আদালত পর্যন্ত যারা রাতের বেলা কোর্ট বসিয়ে বিরোধীদলের নেতাদের শান্তি দিয়েছে তাদের কারো চাকরি গেছে কিনা প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আওয়ামী লীগের অনেকে জামিনে বের হচ্ছে। হাসিনার আমলের নিশিরাতের বিচারকরা এসব জামিন দিচ্ছে এমনটাই বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের একজনেরও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়নি। নিশিরাতের আদালতের কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের গতি শ্লথ উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সরকার কী সংস্কার করবে বোধগম্য নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে, আওয়ামী লীগকে কয়দিন পুলিশ দিয়ে ঠেকিয়ে রাখবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীত নিষিদ্ধ করার কথা বললেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্ববিরোধী অবস্থানে সরকার।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে কখনো প্রধান উপদেষ্টা সফল হবেন না। ফ্যাসিবাদের দোসরদের পরিষ্কার করতে হবে। এ সময় সাংবিধানিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনমুখী সংস্কারে হাত দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির এই নেতা জানান, নির্বাচন ঘিরে বেশি সময়ক্ষেপণের জন্য কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জাতি মেনে নিবে না। সংস্কার ও নির্বাচন দুটোকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিব, এ বক্তব্য সঠিক নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের নামে সাংবিধানিকভাবেই সরকার শপথ নিয়েছে। কিন্তু লেজিটেমিসি ক্রাইসিস দূর করতে নির্বাচিত সংসদ দরকার।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি দলের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করেছে। ছাত্রদের ঘোষণাপত্রের সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে এটিকে সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়া যায় তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ নিয়ে তাড়াহুড়ো না করার আহ্বান জানান তিনি।
আঞ্চলিক সম্পাদক পরিষদের (আসপ) উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. ফজলুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম দোলন প্রমুখ।