বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াত। ১০ বছর ধরে নিজের আত্মজীবনী লিখেছেন তিনি। নাম দিয়েছেন ‘রবি পথ’। অবশেষে প্রকাশ হচ্ছে তার আত্মজীবনী।

আজ ২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয়েছে রবি পথের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। অভিনয়, নির্মাণ, লেখালেখি—সব মিলিয়ে সৃষ্টিশীল ও কর্মমুখর এক জীবন আবুল হায়াতের। ৮০ বছরে এসে এখনো নিয়মিত করছেন অভিনয়, চলছে তাঁর কলমও। অভিনেতার আত্মজীবনী ‘রবি পথ’ বইটির প্রসঙ্গ ধরে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।

কিছু লেখার পর যখন প্রকাশিত হয়, তখন লেখক অনেকটা নির্ভার হন। আত্মজীবনী প্রকাশিত হচ্ছে ভেবে আপনারও তেমন অনুভূত হচ্ছে?

একেবারে নির্ভার তো হওয়া যায় না। মানুষ কিভাবে বইটা নেবে, সে দুশ্চিন্তা তো আছে মনের মধ্যে। তবে অত চিন্তা করে লিখিনি।

যা মনে এসেছে, লিখেছি। এটা তো ক্লাসিক কিছু না, জীবনের কথাগুলোই লিখেছি। সেদিক থেকে অনেকটা নির্ভার। ১০ বছর ধরে লিখেছি। অবশেষে প্রকাশিত হচ্ছে।

১০ বছর! এত সময় লেগে গেল কেন?

আলসেমি, আর কিছু না। কখনো এক পাতা লিখেছি, আবার ফেলে রেখেছি, কখনো আবার একসঙ্গে ১০ পাতা লিখেছি। কোনো সময় মনে হয়েছে লিখব না। এ কারণেই সময় লেগে গেছে।

আত্মজীবনী লেখার ভাবনাটা এসেছিল কিভাবে? 

হঠাৎ মনে হয়েছিল, জীবনে তো অনেক ঘটনা আছে। ছোটবেলা থেকে অনেক কিছু দেখেছি। সেগুলো গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছি বইতে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা জানেও না, এ রকম পুরনো অনেক ঘটনা আছে। আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবাই উৎসাহ দিয়েছে। পরে ভাবলাম, লিখেই ফেলি।

আপনার মতো অভিজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ শিল্পী যাঁরা, তাঁদেরও কি আত্মজীবনী লেখা উচিত বলে মনে করেন?

আমার মনে হয়, এটার একটা ভালো দিক আছে। ৮০ বছরের একটা ভ্রমণ আমার, অনেক কিছু দেখেছি, যা অনেকে হয়তো জানে না। সুতরাং আমার মতো যাঁরা আছেন, তাঁরাও যদি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আত্মজীবনী লেখেন, তাহলে অবশ্যই সেটা নতুন প্রজন্মের জন্য ভালো।

অধিকাংশ মানুষ আত্মজীবনীতে ইতিবাচক ঘটনাগুলোই তুলে ধরেন। নেতিবাচক বিষয় সচেতনে এড়িয়ে যান। এ ক্ষেত্রে আপনি কতটুকু সৎ থেকেছেন?

আমি লিখে গেছি ধুমধাম, কোনো চিন্তা-ভাবনা করিনি। হয়তো অনেক কিছু বাদ পড়ে গেছে। আবার কিছু ঘটনা হয়তো মনে হয়েছে, না লিখলেও চলে। তবে যেটা লিখেছি, সেটা থেকে কাটাছেঁড়া করিনি।

অভিনয়ের ব্যস্ততা কেমন এখন?

অভিনয় তো চলছে। গত সপ্তাহেও নাটকের শুটিং করেছি। আবার আগামী সপ্তাহেও শিডিউল দেওয়া আছে। হাতে কাজ আছে। তবে আগের মতো করি না আরকি। দেখেশুনে করি। আউটডোর শুটিংয়ে বেশি দূর যাই না, কাছাকাছি হলে যাই। শরীরের দিকটাও খেয়াল রাখতে হয়। এ কারণে সব কাজ করা সম্ভব হয় না।

এখন যে কাজগুলো করেন, প্রায় সবই এ প্রজন্মের নির্মাতা-শিল্পীদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া কেমন?

আমার সময়কার নির্মাতা তো এখন নেই। বেশির ভাগই এ সময়ের পরিচালক। আবার আমার পরিচালনায়ও তরুণ শিল্পীরা কাজ করে। কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না। আমার মিডিয়া হলো অভিনয়, এখানে বয়স কোনো ব্যাপার না।

তরুণ সহশিল্পীদের সঙ্গে কিভাবে মানিয়ে নেন?

এডজাস্টমেন্টে সমস্যা হয় না। তারা আমার কাছে অনেক কিছু জানতে চায়, আমিও তাদের কাছ থেকে এ সময়ের বিভিন্ন বিষয় জানার চেষ্টা করি। লেখাপড়া করে আসা ছেলেমেয়ে, অনেক কিছু জানে। এখানে আসলে একে অপরের অভিজ্ঞতা, জানাশোনা ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়টাই মুখ্য।

আপনার মতো কর্মমুখর জীবন খুব মানুষই পায়। এই জীবন নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

আমি সন্তুষ্ট। সারা জীবনই খুব কম চেয়েছি, কম কাজ করেছি। তবে পেয়েছি তার চেয়ে অনেক বেশি। সেদিক থেকে আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি।

তবু প্রাপ্তির জায়গায় কিছুটা অপূর্ণতা অনুভব করেন? রাষ্ট্রীয় সম্মাননার কথা বলছি আরকি...

দর্শকের ভালোবাসাটাই আসলে বড় ব্যাপার। আক্ষেপ করে তো লাভ নেই। আমি আমার কাজ করে গেছি। যদি তাঁরা মনে করে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত, দেবে। তবে সেসব নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমি নিজের কাজটাই করে যাচ্ছি।