ঘাটে বাঁধা আছে মাছ ধরার নৌকা। কাজ না থাকায় অলস দিন কাটছে জেলেদের। সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মহাজন এলাকায় নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীর সংযোগস্থলে।
প্রায় ৪০ বছর ধরে নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীতে মাছ ধরেন সাকিব হাসান । স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করেন না তিনি। নেই চাষের জমিজমাও। বর্তমানে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে কোনো সরকারি সহায়তা পাননি তিনি। ফলে তাঁর পরিবারকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
সাকিব হাসান বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীর সংযোগস্থল মহাজন এলাকায়। তিনি বলেন, ‘ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জাল-দড়ি উঠোয় থুইছি। এখন আমি বেকার। আর কোনো আয় নাই। মাছ ধরে দিন আনি দিন খাই। আমার এখন ধার-কর্জ করে খেতে হচ্ছে। ছেলে মেয়ের মুখে ঠিকমতো দুই মুঠ ভাত দিতি পারতিছিনে। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়িছি।’
সাকিব সহ এলাকাটির জেলেরা জানান, এখন নদীতে ইলিশ বাদে অন্য মাছ ধরার অনুমতি আছে। কিন্তু এ সময় নদীতে ইলিশ বাদে অন্য মাছ তেমন পাওয়া যায় না। কষ্ট করে জাল ফেলে তেমন লাভ হয় না। কালিয়ার মহাজন এলাকায় অন্তত ৪০০ জেলে কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন। জেলেদের দাবি, ইলিশ মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময়ে সরকার থেকে যেন পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
মহাজন এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রূপালী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার স্বামী সুতার জাল দিয়ে ইলিশ ধরে। মাছ ধরি যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে। এখন অভিযান চলায় মাছ ধরতে পারছে না, বাড়িত বসি আছে। এক দিন মাছ না ধরলে সংসার চলে না। আইজ বইনের বাড়ি যাচ্ছি, তাঁরা হয়তো ১০ সের চাল দেবেনে—তাই এনে ছেলেমেয়ে নিয়ে খাবানি।’
জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই ২২ দিনে সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে জেলেদের দিক বিবেচনা করে সরকার খাদ্যসহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু নড়াইলের জেলেরা এ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি।
নড়াইল জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ৩৮টি ইলিশ অধ্যুষিত জেলা রয়েছে। এর মধ্যে নড়াইল জেলা একটি। ২০২২ সালে নড়াইলকে ইলিশ অধ্যুষিত জেলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। মূলত নড়াইল জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা এলাকায় নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীতে এ মাছ মেলে। দুটি উপজেলায় ইলিশ আহরণে যুক্ত আছেন অন্তত ১ হাজার ৮৫০ জন জেলে। এর মধ্যে কালিয়া উপজেলায় ১ হাজার ২০০ জন ও লোহাগড়া উপজেলায় আছেন ৬৫০ জন জেলে।
লোহাগড়া উপজেলার কুন্দশী জেলে পাড়ার অরুণ মালোর ছয় সদস্যের সংসার। ইলিশ মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় কষ্টে দিন যাচ্ছে তাঁদেরও। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে খাল-বিলে যেসব পুঁটি মাছ পাচ্ছেন, তা গ্রামে গ্রামে বেচে যা পান তা দিয়ে তিন বেলার ভাত জোটে না। একই অবস্থার কথা বলেন কুন্দশী জেলে পাড়ার বিপ্লব বিশ্বাস, মোঃ বিশ্বাস, বিধান মালো, সঞ্জয় মালো, লক্ষ্মণ মালো, শ্মশান মালো, সুনীল মালোসহ অন্য জেলেরা।
এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাছুম খান জানান, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অনেকবার নদীতে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় জাল-দড়ি পোড়ানো হয়েছে। কিন্তু জেলেরা বলেন, ‘খাব কী?’ আসলেই এই জেলেরা খুব অসহায় ও হতদরিদ্র। তাঁদের সহায়তা দেওয়ার জন্যও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
একই কথা জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০২২ সালে নড়াইল ইলিশ অধ্যুষিত জেলা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তবে ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য কোনো ধরনের সহায়তা আসেনি। ইলিশ আহরণে যুক্ত জেলেদের জন্য আর্থিক সহায়তা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানান
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page