বাংলাদেশে সরকার ১৯৯২ সালে ডিশ এন্টিনার অনুমোদন দেয়। অপারেটরদের দাবি, ডিশ গ্রাহক ৪০ লাখ।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ, স্থানীয় চ্যানেল মালিক ও কর্মীদের ধারণা, এই সংখ্যা তিন থেকে সোয়া তিন কোটি। এর মধ্যে পে-চ্যানেল গ্রাহক ২ লাখ এবং ফ্রি চ্যানেল গ্রাহক ৪০ লাখ। (বাংলাট্রিবিউন ১৯/০৪/২০১৯)
উল্লেখ্য, সরকারের ক্লিনফিড (বিজ্ঞাপন ছাড়া টিভি ট্রিমিং) ঘোষণার আগে দেশে বিদেশী চ্যানেল প্রচারে ছিল ১০০টি। এর মধ্যে ৬৫টিই ভারতীয়। ভারতীয় এসব চ্যানেলের অনেকগুলোতে সার্বক্ষণিক হিন্দি সিনেমা দেখানো হয়। খুবই অনৈতিক, অবাস্তব আর অশ্লীল কাহিনীতে সাজানো হয় এসব সিরিয়াল। অধিকাংশ কাহিনীর মূল উপজীব্য খুন, সম্ভ্রমহরণ, সম্পত্তি দখল, পরকীয়া, ঘরের বউদের তৎপরতা, শ্যালিকা-দুলাভাইয়ের মাঝে অবৈধ সম্পর্কসহ আরো নানাবিধ অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে সংসারে সৃষ্টি জটিলতা এবং অশান্তি। লিভ টুগেদার এবং বিবাহ বহির্ভূত সন্তানকে সমাজ খুবই সহজভাবে মেনে নেয়া হচ্ছে বলে উপস্থাপন করা হয়, যা পশ্চিমা সমাজে চলছে। সব সিরিয়ালেরই ঘটনাগুলো উচ্চ বিত্ত সমাজের ড্রয়িং রুমের। ড্রয়িং রুমে বসে পাত্র পাত্রীরা পরিকল্পনা করে কিভাবে কার সংসারে আগুন লাগানো যায়। কূটনামি আর ষড়যন্ত্রই হলো অনেক সিরিয়ালের মূল বিষয়বস্তু।
দর্শকদের মতে, এসব সিরিয়ালের পোশাক অশ্লীলতায় ভরা। অনেক সময় পোশাক এতই খোলামেলা থাকে বলার মতো নয়। তাছাড়া প্রায় সময়ই থাকে আপত্তিকর দৃশ্য। যা শিশুদের সামনে দেখা যায় না। কিন্তু বাসার অনেক ছোট ছেলে মেয়ে এসব দেখছে। দেশের অধিকাংশই গৃহিনীদের অবসর সময় কাটে এসব সিরিয়াল দেখে। এসব দেখে দেখে সংসারে নানা অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। দেশে পারিবারিক বন্ধন দ্রুত ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বিবাহিতরাও পরকিয়ায় লিপ্ত হচ্ছে। অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। পরিনামে সুখের সংসারগুলো জাহান্নামে পরিণত হচ্ছে। কিভাবে দেশের পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে, তা কয়েকটি পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, পুরুষরা বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মূলত তাদের প্রতি স্ত্রীর সন্দেহপ্রবণতা, সংসারের প্রতি স্ত্রীর উদাসীনতা, বদমেজাজ, সন্তান না হওয়া ইত্যাদি তুলে ধরেছেন। নারীরা কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন পরকীয়া প্রেম, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, মাদকাসক্তি ইত্যাদি। নাম গোপন রাখার শর্তে একজন বলেন, ‘আমার স্ত্রী অনেক সন্দেহপ্রবণ ছিল। পাশাপাশি সম্পর্কের প্রতিও উদাসীন ছিল। এ ছাড়া সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি এলে তা নষ্ট হয়ে যায়। তারা সহযোগিতার নামে নেতিবাচক মানসিকতার দিকে ঠেলে দেয়।’ এর এক পর্যায়ে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় বলে জানান তিনি।” (দৈনিক কালের কণ্ঠ ২৬/০৬/২০২১)
জাতীয় মহিলা পরিষদ নারীদের তালাকের ক্ষেত্রে প্রধানত চারটি কারণকে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো: যৌতুক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং স্বামীর পরনারীতে আসক্তি। পুরুষরা কেন স্ত্রীকে তালাক দেয় তা নিয়ে এরকম কোন আলাদা গবেষণার কথা জানা নেই। তবে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এমন কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে কথা বলা জানা যায় তারা প্রধানত স্ত্রীর ‘চরিত্র দোষকেই’ দায়ী করতে চান। আর এ থেকে একটি বিষয় এখন স্পষ্ট যে ‘পরনারী’ বা ‘পরপুরুষে’ আসক্তির অভিযোগ বাড়ছে। এজন্য কেউ কেউ পাশের একটি দেশের হিন্দি এবং বাংলা টেলিভিশন সিরিয়ালকে দায়ী করতে চাইছেন। তাদের কথা হল এইসব সিরিয়ালের প্রধান উপজীব্যই হল ‘পরকীয়া প্রেম।’
তথ্য অনুযায়ী, বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণই হলো, স্বামী-স্ত্রী’র পরস্পরের প্রতি সন্দেহ প্রবণতা। স্বামী ও স্ত্রী’র ‘পরনারী’ বা ‘পরপুরুষে’ আসক্তি, পরকীয়া, প্রেম বিনোদন তথা বেপর্দা ও বেহায়াপনাই দায়ী। ডিশ এন্টিনার মাধ্যমে বিদেশী টিভি চ্যানেল বিশেষত ভারতীয় চ্যানেলগুলো এসব অশ্লীলতা দেশে সয়লাব করে দিচ্ছে। কিন্তু দেশে এসব দেখার কোন কর্তৃপক্ষ নেই!
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page