হাবিবুল্লাহ বাহার-শ্যামনগর উপজেলা প্রতিনিধি :
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও থেমে নেই রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
দলীয় মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ দলের কেন্দ্র ও হাইকমান্ডে জোর যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। সাতক্ষীরা-০৪ সংসদীয় আসন শ্যামনগরের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভেতরে ভেতরে ভোটের মাঠ গোছাতে নেমে পড়েছেন।
দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি ওয়ার্ড ভিত্তিক জনমত গঠন ও সমর্থন বাড়াতে নানা কৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য জাতীয় দিবস সামনে এলেই সব দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোট চেয়ে ব্যানার ফেস্টুন প্রচার করে চলেছেন।
থেমে নেই অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণাও।
এদিকে নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাতক্ষীরা-০৪ আসনের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এখনো সামনে আনতে পারেনি।
এদিকে সাতক্ষীরা-০৪ আসনের শ্যামনগরের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সর্বসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানান আলাপ। বিশেষ করে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন প্রেক্ষাপটে সাতক্ষীরা-০৪ আসনের শ্যামনগরের সংসদীয় আসনের ভোটারদের মধ্যে মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গেছে।
সাধারণ ভোটারদের কথা, বিগত দুই যুগে দেশে বারবার ভোট হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও মানবিক সমাজের তেমন উন্নতি ঘটেনি।
ভোটারদের ভাবনা, এবার ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশকে নতুন করে সাজানোর সুযোগ এসেছে। পেশীশক্তির ব্যবহার রোধ, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধ, সামাজিক বিশৃঙ্খলা নিরসনে আসন্ন নির্বাচনে নিরব ভোট বিপ্লবের ইঙ্গিত সাধারণ ভোটারদের।তারা বলছেন, সামাজিক কারণে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সামনে চুপচাপ থাকলেও ভোটের দিন নিরবে পছন্দের যোগ্য, মেধাবী, সৎ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকেই তারা বেছে নেবেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনের ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩৬। এ আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির অন্তত পাঁচজন হেভিওয়েট প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন কিনতে চান কয়েকজন তরুণ নেতাও। বিপরীতে একক প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছে জামায়াত সাতক্ষীরা-৪ আসনে শ্যামনগরে লড়বেন একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম। মাঠে রয়েছে ইসলামী আন্দোলনের একজন সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে, মাঠে দেখা যাচ্ছে না সদ্যগঠিত দল এনসিপির কোনো নেতাকর্মীকে।
সাতক্ষীরা-০৪ আসনে শ্যামনগরে বিএনপির একাধিক হাই প্রোফাইল সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন।এ আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলীয় কর্মসূচি পালনেও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ভোটের মাঠের হিসাব নিকাশ কষছেন। নিজ নিজ প্রভাব ও অবস্থান জানান দিতে চলছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন। এমনকি তাদের সমর্থকরা একাধিকবার সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন।
ভোটের মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহি মুন্না বলেন, আমরা সাতক্ষীরা-৪ আসনটি তারেক রহমানকে উপহার দিতে চাই। এজন্য তৃণমূলে দলকে সুসংগঠিত করা হচ্ছে। ৩১ দফা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী জানান, তিনি সাতক্ষীরা-২ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনকে সামনে রেখে এগুচ্ছেন। কেন্দ্রের সিগন্যাল পেলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, শ্যামনগরে বিএনপির কার্যক্রম শুরুর পর থেকে আমি দলের সাথে আছি। নেতৃত্ব দিচ্ছি। উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সংগঠিত করেছি। আগে আমাদের শ্যামনগরে বিএনপিতে কোনো গ্রুপিং ছিল না। যখন জেলা কমিটির নেতৃত্বে ইফতেখার আলী ও তারিকুল হাসান আসলো, তখন থেকেই গ্রুপিং শুরু। এই গ্রুপিংটা মূলত সাতক্ষীরা কেন্দ্রিক। তবে, আমি মনোনয়ন পেলে কোনো গ্রুপিং থাকবে না।দলীয় মনোনয়ন ও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ড. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাকে তৃণমূলে গণসংযোগ বৃদ্ধি, দলকে সুসংগঠিত করা, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির নির্দেশ দেন এবং প্রস্তুতি নিতে বলেন। আমি সে অনুযায়ী কাজ করছি।
দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে সম্ভাব্য প্রার্থী যারা থাকে, তাদেরকে কেন্দ্র করে একটি বলয় গড়ে ওঠে। এটা মনোনয়ন কেন্দ্রিক। দল যখন চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, এই দূরত্ব কমে আসবে। ইতোমধ্যে দূরত্ব কমে আসতে শুরু করেছে। যাকেই মনোনয়ন দিক না কেন আমাদের সবারই লক্ষ্য ধানের শীষকে জয়যুক্ত
নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি এইচএম গোলাম রেজা বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেব। আমি শ্যামনগর কালিগঞ্জের মানুষের সাথে সবসময় ছিলাম, থাকবো।এ আসনে ভোটের মাঠে লড়বেন গণসংহতি আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার সংগঠক আলফাত হোসেন। ক্লিন ইমেজের তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলাজুড়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন।
নিজস্ব দলীয় কর্মী বাহিনীসহ নিজের স্বচ্ছ ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে যেতে চান তিনি। সাধারণ ভোটারদের কাছেও মোঃ আলফাত হোসেনের বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তিনি বলেন পরিবর্তন সম্ভব,পরিবর্তন চাই, এই স্লোগানকে বিশ্বাস করি ও উপকূলীয় অঞ্চলের লাঞ্ছিত -বঞ্চিত, অসহায় দারিদ্র্য মানুষের সেবার লক্ষ্যে মজলুমের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য।
নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত না হলেও জামায়াতের এ নেতা সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এছাড়া গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি থেকে সাতক্ষীরা-৪ আসনে তেমন কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না।
সাতক্ষীরা-০৪: এ আসনটি সাতক্ষীরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। সাতক্ষীরার বৃহত্তর উপজেলা হওয়ায় সব দলই এ আসনটিকে নিজেদের ডেরায় রাখতে চায়। এ আসনে বিগত দিনে আওয়ামীলীগের এক চেটিয়া আধিপত্য ছিল। তবে বিগত ১৬ বছরে বিতর্কিত একাধিক নির্বাচনে ভোট দিতে না পেরে ঝিমিয়ে পড়েছিলেন জামায়েত-বিএনপির তৃণমূল সমর্থকরা। এবার তারা ভোটের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ভোটাররা বলছেন, তারা আবার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
তবে জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি ও গণসংহতি আন্দোলনের একাধিক প্রার্থী ভোটের মাঠে সক্রিয় হলে জামায়াত এ আসনটি দখলে নিতে পারবে না বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের।
এ আসনে ভোটের মাঠে লড়বেন গণসংহতি আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলার সংগঠক আলফাত হোসেন। ক্লিন ইমেজের তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজ নির্বাচনী এলাকা ছাড়াও জেলাজুড়ে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবে আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন।
ভোটারদের ভাবনা:
সাতক্ষীরা-০৪ আসনের সংসদীয় আসনের শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার তিন শতাধিক ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে তাদের মনোভাব জানার চেষ্টা করেছেন এ প্রতিবেদক।
ভোটাররা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে অনেকেই ভোট দিতে পারেননি। চাপে পড়ে, ভয়ভীতির কারণে স্থানীয় নির্বাচনে জোর করে ভোটারদের নিয়ে যাওয়া হতো। জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তারা এবার নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চান।
ভোটাররা জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করবে বলে তাদের বিশ্বাস। ভোটাররা আগামী নির্বাচনে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে ক্লিন ইমেজের সৎ, যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের ভোট দিতে চান।
ভোটাররা পেশীশক্তি প্রদর্শনকারী, ভয়ভীতি দেখানো, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ ও অসৎ প্রভাবশালী প্রার্থীদের ভোটের মাধ্যমেই জবাব দিতে চান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোটাররা বলেন, ভোটের সামনে অনেকেই সামাজিক নেতাদের ম্যানেজ করে ভোট সংগ্রহ করেন। এতে করে বিগত দিনগুলোতে কেবল ভোটের পরে ভোট হয়েছে। নেতার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দেশের ও সমাজের কোনো বাস্তবিক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়নি।
আগামী নির্বাচনে ব্যালটেই চিহ্নিত অসৎ নেতাদের জবাব দেবেন তারা।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page