মুহাম্মাদ রমজান মাহমুদ-মানিকগঞ্জ :
ডেরা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কবরস্থানের চারপাশের জমি ক্রয় করে সেখানে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। পরবর্তীতে কবরস্থানের জমি ব্যবহার করে ঘর নির্মাণ করে হরিণ পালন শুরু করে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পুরান গ্রামের মৃত শোভাতনের চার ছেলে মিলে মোট ১৩ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের মা জমিটি ওয়াকফ করার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী তারা ১০ শতক এবং মৃত আশেক আলীর ২ শতক জমি ওয়াকফ করেন। মোট ১২ শতক জমিতে গড়ে ওঠে কবরস্থান, যেখানে এখন পর্যন্ত ১০০ থেকে ১৫০ জন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে। এ কবরস্থানে প্রথম দাফন হয় মৃত শোভাতনের।
মৃত শোভাতনের ছেলে হযরত আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,আমার মায়ের নির্দেশেই আমরা চার ভাই মিলে জমি কিনে কবরস্থান হিসেবে ওয়াকফ করেছিলাম। মৃত আশেক আলীও দুই শতক জমি দিয়েছিলেন। মোট ১২ শতক জায়গায় গড়ে ওঠে এই কবরস্থান, যেখানে আমার মাকে সবার আগে দাফন করা হয়। এখন পর্যন্ত এখানে ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষ সমাহিত আছেন।
কিন্তু ডেরা কর্তৃপক্ষ আশপাশের জমি কিনে নিয়ে কবরস্থানের রাস্তাই বন্ধ করে দিয়েছে। পরে তারা নতুন জায়গায় কবরস্থান করার প্রস্তাব দেয় এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৫ লাখ টাকা দিয়েছে। তখন তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ডেরার ভেতরে কবরস্থানটি সংরক্ষণ করবে, ফুলের বাগান বানাবে এবং যাদের আত্নীয় স্বজনের কবর আছে ওই সকল পরিবারের সদস্যরা এসে কবর জিয়ারত করতে পারবে।
কিন্তু বাস্তবে তারা কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। কাঁটাতারের বেড়ার আড়াল থেকে কবরস্থানটা এখন শুধু দেখা যায়। এর চেয়েও কষ্টের বিষয় হলো, কবরস্থানের ওপর ঘর বানিয়ে সেখানে হরিণ পালন করছে। এটা আমাদের মৃত আত্মীয়-স্বজনের প্রতি চরম অসম্মান এবং আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।
অনুসন্ধান বলছে, কবরস্থানের যে জমিতে হরিন পালন করা হচ্ছে সেখানে বন বিভাগ থেকে ছয়টি হরিন পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে । তবে রিসোর্টটিতে ১৯ টি হরিন পালন করা হচ্ছে। অনুমতির বাইরে বন্যপ্রাণী পালনের বিষয়টি সরাসরি আইন ভঙ্গের শামিল। আইন অনুযায়ী ১০ টির নিচে হরিন পালন ব্যক্তিগত পর্যায়ের হলেও ১০ টির বেশিকে বাণিজ্যিক বা খামারি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। ডেরা রিসোর্ট বাণিজ্যিক হিসেবে আবেদন করলেও এখনও কোন ছাড়পত্র পাননি। তবে রিসোর্সটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ শাদী দাবি করেন, তারা বাণিজ্যিক লাইসেন্স পেয়েছেন।
বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক নিগার সুলতানা জানান, ডেরা রিসোর্ট বাণিজ্যিক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনের পর নিয়ম অনুযায়ী পরিদর্শন করা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক লাইসেন্স এখনও প্রদান করা হয়নি। হরিন পালনের স্থানে কবরস্থান ছিলো এমন বিষয় জানালে তিনি বলেন, কেউ আমাদের এমন তথ্য প্রদান করেননি। তাহলে আমরা অবশ্যই অন্যত্র হরিন খামার করার তাগিদ দিতাম।
এ বিষয়ে ডেরা রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ শাদী বলেন, “৮ তারিখের শুনানির ফলাফল আমরা পেয়ে গেছি। আমাদের সব ঠিক আছে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সরকারি বিধি বিধান অনুসরন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলে আমরা সহযোগিতা করবো। কিন্তু আইনের ব্যতয় ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page