নূর আলম সিদ্দিকী-নীলফামারী প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন সরকারের অনিয়ম ও দূর্নীতির তদন্ত দাবীতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই ইউনিয়নের ইউনিয়নের সাতজন ইউপি সদস্য তাদের আবেদন নীলফামারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেন। তাদের দেওয়া আবেদনে ৬ টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আবেদনকারী ইউপি সদস্যরা। তবে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।
অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে ওই ইউপি চেয়ারম্যান এক সময় ছাত্রলীগ করতেন,এখন নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের কামারপুকুর ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করার তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব পুকুর, দোকান ও ভবন ভাড়ার টাকা সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করেছেন। অথচ ইউপি সদস্যদের সম্মানী ভাতা প্রদান করতে গড়িমসি করে করছেন তিনি।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্যরা বলেন, কামারপুকুর ইউনিয়ন হলো একটি শিল্পাঞ্চল এলাকা। এখানে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার কর, ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করা হয়। আদায়কৃত এসব টাকার কোন হিসেব না দিয়েই চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার আত্মসাৎ করেছেন। এনিয়ে প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতার দাপটে দমিয়ে রাখেন সবাইকে।
ইউপি সদস্যরা বলেন, সৈয়দপুর উপজেলায় রাজস্ব আয় থেকে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদকেও আয়ের ১% হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা দিয়ে ব্যয় হওয়া কোন প্রকল্প তাদেরকে দেওয়া হয়না। মাসিক সম্মানী ভাতা প্রদানের কথা বলা হলেও তা না দিয়ে ১% এর সব টাকা ভূয়া প্রকল্পের নামে নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারী গাছ কেটে বিক্রিত সেই টাকাও নিজের পকেটে রেখেছেন। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের পুরাতন সেড ঘরের টিন ও কাঠ বিক্রির টাকারও কোন হিসেব দেননি তিনি।
অনিয়ম ও দূর্নীতিতে অভিজ্ঞ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কৌশলে নিজেই প্রকল্প চেয়ারম্যান হয়ে ওইসব প্রকল্পের কাজ না করেই সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেন।
কামারপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া আবেদনে ইউনিয়ন পরিষদের ১২ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জনই স্বাক্ষর করেছেন। তাঁরা হলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান ও ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মুয়ীদ আলাল, ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম, ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম, ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল, ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওহিদুল ইসলাম, ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রহিদুল ইসলাম ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোরসালিন হক।
ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের কারণে এলাকার উন্নয়ন হচ্ছে না। পরিষদের আয়ের চাকা সচল থাকলেও তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছেনা। সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে পকেটস্থ করছেন তিনি। ফলে এলাকাবাসীর কাছে চরমভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের।
অপর ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, তাদের পরিষদের চেয়ারম্যান অনিয়ম করতে করতে বেপরোয়া হয়ে গেছেন। ভিজিডি সুবিধাপ্রাপ্ত অসহায় নারীদের সঞ্চয়ের টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। নিয়ম না মেনে গত মাসে ১৫ টাকা কেজি দরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ করা হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ আলাল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়া হোসেন সরকার ইউনিয়ন পরিষদকে তিনি রাম রাজত্বে পরিণত করেছেন। ইউপি সদস্যদের সাথে পরামর্শ না করেই তিনি পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসলেও এখনও বহাল তবিয়তে তিনি। নিয়মিত অফিস না করায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নবাসী।
অভিযোগের বিষয়ে গতকাল রবিবার বিকেলে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আমিও চাই আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং প্রকৃত তথ্য বেড়িয়ে আসুক।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page