মোঃ আবুল কালাম-নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েক লাখ টাকায় কেনা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটরটি গত এক বছর ধরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই ) দিনে ও রাতে নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন উপজেলায় কয়েক ঘণ্টায় টানা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় তীব্র গরমে অতিষ্ঠ মানুষসহ প্রাণিকুল, তখন নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বেডে গরমে ছটফট করছিলেন রোগীরা। হাসপাতালে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কিছু জটিল রোগের আক্রান্ত রোগীরা চরম গরমে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, এদের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ গর্ভবতী মা, মাতৃত্বকালীন মা, সকল ধরনের রোগী রয়েছেন।
ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ছটফট করতে থাকে নারী পুরুষ, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী রোগীরা। তখন নিরুপায় হয়ে স্বজনরা বাতাস করার জন্য হাতপাখা, কাগজ বা কাপড় ব্যবহার করেন। বিদ্যুৎ না থাকলে অনেক সময় জরুরি চিকিৎসাও ব্যাহত হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২১টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নবীনগর উপজেলার সর্বশেষ হিসেবে মোট ভোটার চার লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৪ জন। সেই সাথে রয়েছে পাশের রায়পুরা উপজেলার একটি অংশের জনগণ; বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে আট কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এইচইডির অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় হাসপাতালের নতুন ভবন। ওই সময় পাওয়ার স্টেশনের সাথে উচ্চক্ষমতার জেনারেটরটি এসেছিল। প্রথমদিকে জেনারেটরটি সচল ছিলো, কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্তৃপক্ষ তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়েছেন, ৩৩ কেভি লাইনের সমস্যার কারণে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতালে নিজস্ব জেনারেটর ও আইপিএস ব্যবস্থা সচল না থাকায় বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগ নেমে আসে ওয়ার্ডগুলোতে,চরম বিপাকে পড়েন সেবা নিতে আসা এবং ভর্তিকৃত রোগী ও স্বজনেরা। প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। তবুও এ নিয়ে কারো নেই মাথা ব্যথা।
রোগী ও তাদের স্বজনরা ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, আগে যেভাবে জেনারেটর ও আইপিএস চলতো, রোগীরা সেবা পেতো, এখনো সেভাবেই চালাতে হবে এবং রোগীদের সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগী বলেন, ‘পাখা চলে না, গরমে বাচ্চা নিয়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়। রাতে ঘুমানোই যায় না। এই হাসপাতালে তো আগে তো আলাদা বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ছিলো,কিন্তু এখন সেগুলো নেই কেন? এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
সফিকুল ইসলাম নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি নিজে হাতপাখা দিয়ে ভাইকে বাতাস দিচ্ছি। অথচ এ হাসপাতালে থাকা জেনারেটরটা এক বছর ধরে ঘুমাচ্ছে।
আরেকজন বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলে সারা শরীর ঘেমে যায়। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। এই সমস্যা সমাধানে হাসপাতালে জেনারেটর বা বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া, হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে কারো কোনো অবহেলা ও ব্যর্থতা রয়েছে কিনা, এ বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।
নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব চৌধুরী বলেন, উচ্চ সম্পন্ন জেনারেটরটি চালানো ব্যয়বহুল, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অবগত করেছি, সরকারিভাবে তেল বরাদ্দ ছাড়া এটা চালানো সম্ভব হবে না। রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জেনারেটরের বিকল্প আইপিএস লাগানোর কথা চলছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কিশলয় সাহা বলেন, হাসপাতালটি ৫০ শয্যার হলেও গড়ে প্রতি দিন ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী ভর্তি থাকে। হাসপাতালে জেনারেটর ব্যবস্থা আছে, তবে জ্বালানি তেলের বরাদ্দ না থাকায় আমরা জেনারেটর চালাতে পারছি না। বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীরা যেমন কষ্ট করে তেমনই চিকিৎসকরাও কষ্ট করে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page