নাজমুল আলম মুন্না-সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরায় মিথ্যা মামলায় ৫২ দিন যাবত জেল খানায় বন্ধী পিতার-মাতার মুক্তির দাবি জানিয়েছে অসহায় ৩ শিশু সন্তান। মোঃ সাব্বির হোসনে (১৪), মো: আবির হোসেন (১১) ও আয়শা আক্তার (৭)। সাব্বির হোসেন বলেন তার পিতা মাতা দুজনই সম্পুর্ণ নির্দোষভাবে জেল খানায় ৫২ দিন বন্ধী রয়েছেন।
আমার পিতা মাতা কারোর গায়ে কোন আঘাত করিনি। তারা আমাদের জন্য জেল খানায় ভিষণ কান্নাকাটি করছে, তারা আমাদের জন্য খুবই উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে আমাদের জীবন। আমরা যে কোন সময় গুম খুনের শিকার হতে পারি। এছাড়া আমি ছোট ভাই বোনদের কিভাবে দেখাশোনা করবো আমি নিজেই তো শিশু। আজকে আমার পরিক্ষা ছিল সেটাও দিতে পারলাম না।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১৩ মে মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাটিয়া মাঠ পাড়া এলাকায় আঃ আজিজ ভুটারের বড় ছেলে হাসানুর রহমানের সাথে। ঘটনার বিষয়ে আটককৃতদের বড় সন্তান মোঃ সাব্বির হোসেন জানান ঐ দিন দুপুর তিনটার দিকে আমার আব্বা ভ্যান চালিয়ে বাড়ি এসে দেখতে পান পার্শ্ববর্তী বাড়ির মালিক সাবেক কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালামের ছোট ছেলে বাপ্পী ছাদের উপর দাড়িয়ে পাশের বাড়ির আকরামের নারকেল গাছের পাতা কেটে নিচ্ছে (যাদেরকে আগেই আ.লীগ আমলে বিতাড়িত করেছিল ঐ কৃষকলীগ নেতা কালাম) বিষয়টি আমার আব্বা হাসানুর যার গাছ তাকে জালালে আবুল কালাম গং আমাদের বাড়িতে এসে আমারে সহ আমার আব্বা মা সবাইকে গালাগালি ও মারপিট করতে থাকে এবং আমাদেরকে ভিশনভাবে আহত করে।
বিষয়টি আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করতে চাই কিন্তু কে কার কথা শোনে। অপরদিকে তারা মিথ্যা নাটক সাজিয়ে কালামের বড় ছেলে সাগর ও স্ত্রী আছিয়া নিজদেরকে কুপিয়ে আহত করে তারা থানায় মামলা দায়ের করে। অথচ সাগর ঘটনার সময় বাড়ীতেই ছিলনা। তখন পুলিশ আমাদের ৪ জনকেই থানায় আটকে রেখে পরদিন ১৪ মে কোর্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জেলখানায় পাঠায়। পরের দিন আমাকে ও আমার কাকা আজিজুল ইসলাম জুলকে ছেড়ে দিলেও আমার আব্বা হাসানুর রহমান ও মা ছালমাকে আজও ছাড়েনি।
সেদিন থেকেই তারা দুজন মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আজও জেলখানায় বন্দি রয়েছে। গ্যানজামের ঘটনাটির টোটাল সিসি ফুটেজ আছে আমাদের কাছে। বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করলে সত্য উদঘাটন হবে বলে দাবি জানান শিশু সাব্বির । এদিকে শিশু সন্তান তিনজনের লেখা পড়া একবারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে এবং না খেয়ে নিদারুন কস্ট ভোগ করছেন বলে তারা জানান। শিশু সন্তান সাব্বির আরও অভিযোগ করে বলেন সাতক্ষীরা থানায় আমাদের নামে করা এই মামলাটির আইও এসআই রাজ এটা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন অথচ তিনি মামলার এমসি রিপোর্ট দিচ্ছেন না। বর্তমানে আমরা অসহায় তিনজন ভাইবোন দিনে এক ওক্ত খাই, দুই ওক্ত না খেয়ে রয়েছি। আমাদের আর কেউ নেই।
আমরা এসআই রাজের কাছে বার বার ধন্যা দিচ্ছি এমসি রিপোর্টটি দেওয়ার জন্য কিন্তু উনি তালবাহানা করছে এবং গত ২ জুন আমাদের বাড়িতে যেয়ে উল্টো হুমকি ধমকি দিয়ে বলে তোমরা ঐ বাড়িতে ইট পাটকেল মারতিছো তোমাদের আবার ধরে নিয়ে যাব। তখন আমরা অনেক ভয় পাই। পরে আমরা তার হাতেপায়ে ধরে এমসি রিপোর্ট চাইলে রিপোর্ট বাবদ আমার কাছে ১০ হাজার টাকা চেয়েছেন। টাকাটি দিলেই এসআই রাজ রিপোর্ট দিবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এতো টাকা কোথায় পাবো।
অথচ রিপোর্টটি কোর্টে দিলেই আমার আব্বা আম্মার জামিন হবে বলে এ্যাডভোকেট আকবার জানিয়েছেন। গত ১৬ মে এবং ৩০ মে আব্বা আম্মার জামিনের তারিখ থাকলেও শুধু মাত্র এমসি রিপোর্ট না দেওয়ায় তাদের জামিন হয়নি। এ বিষয়ে আসামিদের উকিল এডভোকেট আকবর বলেন যেহেতু এজাহারে কুড়াল দিয়ে কোপানোর দেখানো হয়েছে সেহেতু ইনজুরি হয়েছে। এজন্য কোর্ট আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এমসি রিপোর্ট (মেডিকেল রিপোর্ট) জমা দিতে বলেছেন মামলার আইওর কাছে। কোর্ট পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন ৮ জুলাই।
এ বিষয়টির সুরহার জন্য সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী তিন শিশু সন্তানরা।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page