এ বি অপু :
বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে ভোটের হিসাব-নিকাশ প্রতিনিয়তই উত্তপ্ত। প্রতিটি নির্বাচনের আগে ভোটের অঙ্ক, জোটের জট এবং কৌশলের কষাকষি যেন এক অনন্ত নাটক। এবারের প্রেক্ষাপট আরও জটিল, কারণ মূল আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি—আওয়ামী লীগ।
অন্যবারের মতোই এ বছরও আলোচনা ঘুরছে কে কত আসন পাবে, কে কার ভোট কেটে নেবে বা কোন জোট কতটা শক্তিশালী হবে। তবে, এবার একটি দল দৃশ্যপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই নিষিদ্ধ ঘোষণার ফলে আওয়ামী লীগের সংগঠন, মিছিল, মিটিং সবই আইনত বন্ধ। অথচ, এই 'অনুপস্থিত' দলটিই এখন নির্বাচনী সমীকরণের সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর।
নিষিদ্ধ দল, কিন্তু ভোটারের মনে এখনও সক্রিয়
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের ভোটারদের মধ্যে এখনও এক বড় অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। যদিও দলটি নির্বাচনে অংশ নেবে না, তবুও ১৪% ভোটার সরাসরি তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এনসিপি বা জামাতের চেয়ে এই সমর্থন কয়েকগুণ বেশি।
সাম্প্রতিক একটি অনলাইন জরিপে (যেখানে প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন) দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ভোটারদের ৭০% বলেছেন, তারা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। বাকি ৩০% ভোটার নিয়ে শুরু হয়েছে বড় রাজনৈতিক লড়াই। এর মধ্যেই জামাত এবং বিএনপি মরিয়া হয়ে এই ভোটারদের দিকে হাত বাড়াচ্ছে।
জামাতের কৌশল: বিভাজনের রাজনীতি
ট্রান্সক্রিপ্টে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের একজন প্রাক্তন সভাপতি ও জামাতের এক নেতার একসাথে প্রকাশ্যে মঞ্চে বসা—একইসাথে প্রতীকি এবং বাস্তব রাজনীতির এক নতুন কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। বক্তা আওয়ামী লীগের ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিএনপি বা জামাতের মধ্যে অর্ধেক-অর্ধেক ভোট দিতে। উদ্দেশ্য খুবই স্পষ্ট: আওয়ামী লীগের ভোটারদের কেন্দ্রে টেনে এনে জামাত-বিএনপির ভোট ব্যাংক মজবুত করা।
জামাতের মতো দলগুলো বরাবরই হিসাব-নিকাশের রাজনীতি করে। তারা জানে যে বিএনপির সঙ্গে ভোটের ব্যবধান (প্রায় ১০%) পূরণ করতে হলে আওয়ামী লীগের ভোটারদের একটি বড় অংশকে পাশে টানতে হবে।
অবস্থার অনিশ্চয়তা এবং ভোটারদের সিদ্ধান্ত
যদি আওয়ামী লীগের ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যায়, তাহলে নির্বাচনের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা বড় প্রশ্নের মুখে পড়বে। কারণ, এই ভোটারগোষ্ঠীই হতে পারে 'ডিসাইডিং ফ্যাক্টর'। ট্রান্সক্রিপ্টে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সরকার বা অন্যান্য রাজনৈতিক দল যতই চেষ্টা করুক, আওয়ামী লীগের ভোটাররা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা ভোট দেবে না, তাহলে নির্বাচনের ফলাফলের উপর তা বিশাল প্রভাব ফেলবে।
ড. ইউনুস যেমন বলেছেন, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিতে চান। কিন্তু ভোটাররা যদি মাঠে না আসে, তাহলে এই 'সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন' কেবল একটি কাগুজে স্লোগান হয়েই থেকে যাবে।
উপসংহার: এক অদৃশ্য যুদ্ধের শুরু
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি থেকেও আওয়ামী লীগ সবচেয়ে আলোচিত ও প্রভাবশালী। ভোটের হিসাব এখন আর শুধু অংশগ্রহণ করা দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; বরং অংশগ্রহণ না করা দলটির ভোটাররা নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতি শুধু ভোটের সংখ্যা নয়, বরং মানুষের আবেগ, প্রত্যাশা ও বিশ্বাসের একটি জটিল সমীকরণ। সেই সমীকরণে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ অবস্থান আরও বড় একটি অনিশ্চয়তার বীজ বুনছে, যা আগামী দিনের বাংলাদেশি রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page