মো: রিয়াজুল ইসলাম-সিনিয়র রিপোর্টার :
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একটি সাধারণ চিত্র চোখে পড়ছে, প্যাথলজিক্যাল টেস্টে "২০% থেকে ৩০%" পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। এই অফারের প্রচারণা চারদিকে ঝুলছে পোস্টার-ব্যানারে। কিন্তু এক গুরুতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে: এই 'মার্কেট রেট' বা 'মূল্যছাড় পূর্ববর্তী মূল্য' কে ঠিক করে দিয়েছে? দেশের কোন কর্তৃপক্ষ এই রেট অনুমোদন করেছে?
সম্প্রতি রাজধানীর একটি স্বনামধন্য হাসপাতালে একটি টেস্ট রিসিটে দেখা গেছে, তারা একাধিক টেস্টে উল্লেখযোগ্য "ডিসকাউন্ট" দিয়েছে। কিন্তুু তাদের উল্লেখ করা মার্কেট রেট কোথায় থেকে আসলো? হয়ত উনারা উনাদের লোক দিয়ে সার্ভে করে রেট বের করেছেন বা অন্য কোন উপায়ে। সরজমিনে দেখা যায় একই পরিক্ষা অন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে উনাদের ডিসকাউন্টের পরও কম টাকায় করা যায় এবং একেক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একেক রকম ।তখন হয়ত বুঝাবেন উনাদের মেশিন আরও উচ্চমানের। সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মেশিনগুলোও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিক্ষা করা দরকার। নইলে কম খরচে নিম্নমানের মেশিন দিয়ে পরিক্ষা করলে সেই রিপোর্ট কি হবে? আর ঐ রিপোর্ট দিয়ে ডাক্তারের চিকিৎসাই বা কেমন হবে? মূল কথা হয়ত অতিরিক্ত খরচ না হয় রোগির জিবন সংকটাপন্ন! তাই নয় কি?
এ ধরনের কৌশল মূলত একপ্রকার প্রতারণা। রোগীর সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা ও মুনাফার মাধ্যমে চিকিৎসাব্যবস্থাকে কলুষিত করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে সাধারণ মানুষ ঠকছে, অন্যদিকে সমাজে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অনেক ক্ষেত্রেই এসব টেস্ট থেকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কমিশন পান। রোগীকে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষায় বাধ্য করা, একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে ভাগাভাগি—এসবই এখন প্রকাশ্য গোপন। রোগী এবং তার পরিবার চিকিৎসার চাইতে বেশি সময় ব্যয় করছে টেস্টের বিল নিয়ে !
সরকারের প্রতি জোর দাবি:
১. প্যাথলজিক্যাল টেস্টের রেট নির্ধারণে সরকারি মানদণ্ড ও সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ জরুরি। যেন সব সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান একটি যুক্তিসঙ্গত ও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে টেস্ট সেবা প্রদান করে।
২. ডাক্তারদের কমিশন নেওয়ার প্রবণতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। আইনি পদক্ষেপ ও নজরদারির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে, টেস্ট লিখে দিয়ে কোনো চিকিৎসক এর থেকে আর্থিক লাভ না পান।
৩. সব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মূল্য তালিকা এবং ডিসকাউন্ট ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি মূল্য নির্দিষ্ট নীতিমালায় থাকতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত হতে হবে।
সরকার চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসি ও সংশ্লিষ্ট কমিশনের সমন্বয়ে একটি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। অন্যথায়, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসায় পরিণত হয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন চলছে এবং চলতেই থাকবে ।
এই প্রতিবেদনের সাথে একটি রিসিটের ছবি সংযুক্ত করা হলো সেটা মূল কপি হলেও একটি নমুনা মাত্র। হয়তবা অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বা বেসরকারি হাসপাতালে আরও বেশি রাখা হয়। তবে দেশের প্রায় সব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতালেই একই ধরনের ব্যবসায়িক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
সতর্কতা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এখনই পদক্ষেপ জরুরি।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page