মোঃ আব্দুল বারী :
সরকার বা নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি তবে, আগামী বছরের (২০২৬ সালের) এপ্রিলে নির্বাচন হতে পারে বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এমন ঘোষণা পেয়ে নওগাঁয় মাঠে নেমে পড়েছেন আগ্রহী প্রার্থীরা। তাঁরা ঈদুল আজহার ছুটিতে এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
ঈদ উদযাপন করতে নিজ নিজ গ্রামে ফিরেছিলেন কর্মজীবী মানুষ। আর নানাভাবে তাঁদের কাছে যাওয়া এবং নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতাদের বেশি সরব দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়েনি।
নওগাঁর ১১টি উপজেলা নিয়ে সংসদীয় ছয়টি আসন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও জামায়াত নওগাঁর ছয় আসনেই তাঁদের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীরা ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ঈদের ছুটিতে গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজারে, চায়ের দোকানে ও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটেছেন। ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর পাশপাশি নিজের বিষয়ে জানান দিচ্ছেন তাঁরা।
নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন। এ আসনে বিএনপির টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ছালেক চৌধুরী, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও পোরশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তাঁরা তিনজনই ঈদের আগে ভোটারদের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবী ও সেমাই-চিনি বিতরণ করেছেন। ঈদের ছুটিতে ঈদ পুনর্মিলনীসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের বিষয়ে জানান দিয়েছেন বিএনপির সম্ভাব্য এই তিন প্রার্থী।
এছাড়া ঈদে সরব ছিলেন নওগাঁ-১ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ মাহবুবুল হক। তিনি বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লিদের কাছে দোয়া প্রার্থনা এবং সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দলের পক্ষ থেকে যখন যেভাবে নির্দেশনা আসছে সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফার প্রচার ও লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি এলাকার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও খাওয়া-দাওয়া করছেন। এছাড়া তাঁর বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেছেন। ঈদের ছুটিতে নারী ও তরুণদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মনবিনিময় করেছেন।
পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২ আসন। এই আসনে কেন্দ্রীয় বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খান, নওগাঁ জেলা বিএনপি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী ও ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চপল চৌধুরী বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপর রয়েছেন। ঈদের ছুটিতে তাঁরা তিনজনই ব্যস্ত সময় পার করছেন। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, ঈদ পুনর্মিলনী, ক্রিকেট ও ফুটবল ম্যাচের পুরস্কার বিতরণীসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে তাঁরা তাঁদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এছাড়া ঈদের ছুটিতে সরব ছিলেন নওগাঁ-২ আসন থেকে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক। খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই আমার এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করে আসছি। ঈদের ছুটির সময়টাতে চেষ্টা করেছি আমার নির্বাচনী এলাকার সব গ্রামে সব মানুষের কাছে পৌঁছাতে। মানুষের ভোটের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী নির্বাচনে আমি দলের মনোনয়ন চাইব।
মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৩ আসন। এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার মরহুম আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী বিএনপি নেতা পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি। জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রবিউল আলম বুলেট। এখানে জামায়াতে ইসলামী মাহফুজুর রহমানকে তাঁদের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এবার ঈদে বিএনপি ও জামায়াতের এসব নেতারা বেশ সরব দেখা গেছে। বিএনপি নেতা ফজলে হুদা বাবুল বলেন, শুধু এবার নয় প্রতি ঈদেই চেষ্টা করি এলাকার গরীব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ঈদের আগে দুই উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি ও পাঞ্জাবী বিতরণ করেছি। ঈদের ছুটিতে গ্রামীণ নারী ও তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ ভোট দিতে অপেক্ষা করছেন। ভোট মানে তাঁদের কাছে একটা উৎসব। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ সেই উৎসব থেকে বঞ্চিত।
মান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৪ আসন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে সরব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল মতিন, মান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকলেছুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী টিপু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরী। জামায়াতে ইসলাম এই আসনে জেলা জামায়াতের আমীর খন্দকার মুহাম্মদ আব্দুর রাকিবকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। বিএনপি নেতা আব্দুল মতিন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন দেওয়া। কিন্তু তারা নির্বাচন রেখে অন্য কাজে ব্যস্ত। কেউ দেশের মানচিত্র পরিবর্তন করতে চায়, কেউ সংস্কারের নামে নানা কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত যে কারণে জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আমরা যাঁরা রাজনীতি করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাঁরা সকল পরিস্থিতিতে জনগণের সাথেই আছি।
নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৫ আসন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সরব রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, তিন বারের নওগাঁ পৌরসভার সাবেক মেয়র নজমুল হক সনি এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ধলু। এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে আরও সরব রয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক, সদস্য সচিব বায়েজিদ হোসেন, যুগ্ন আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান তুহিন। এই আসনে জামায়াতে ইসলাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোটেক আ স ম সায়েমকে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক ও আত্রাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম, রাণীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইছাহাক আলী, এবং জেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বেলাল। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আলমগীর কবির ও এই আসন থেকে বিএনপির টিকিট পেতে তৎপর রয়েছেন। এই আসনে জামায়াতে ইসলাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে আত্রাই উপজেলা জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ খবিরুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন। বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। এরপর মানুষের কল্যাণের জন্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে প্রায় পাঁচ দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৮ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। এরপর বিএনপির সকল আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে থেকে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। সততা ও নিষ্ঠার সাথে দলের জন্য কাজ করে গেছি। দলের একজন দীর্ঘদিনের কর্মী হিসেবে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঈদে সরব দেখা গেলেও নতুন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page