আকতারুজ্জামান-তানোর,রাজশাহী :
রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া মহল্লার স্বশিক্ষিত উদ্ভাবক নূর মোহাম্মদ উদ্ভাবন করেছেন এক নতুন জাতের ধান, যার নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান-২’। তার দাবি, এই ধানের চাল দেশের জনপ্রিয় কাটারিভোগ কিংবা জিরা চালের চেয়েও বেশি চিকন।
নূর মোহাম্মদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা না থাকলেও ধানের নানা বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণায় তার রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। কৃষকের পর্যায়েই তিন বছর আগে এই নতুন জাত উদ্ভাবন করেন তিনি, এবং নিজের নামেই রাখেন এর নাম। ইতোমধ্যে এই ধান বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং কৃষকেরা ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে এর চাষ শুরু করেছেন।
এই ধান দিয়ে রান্না করা যায় ভাত, পোলাও, খিচুড়ি, তেহারি, বিরিয়ানি এমনকি পায়েসও। ভাত হয়ে গেলে তা থেকে পান্তাও খাওয়া যায়। আমন ও বোরো উভয় মৌসুমেই এই ধানের চাষ সম্ভব হয়েছে, যা এর বহুমুখী সম্ভাবনার দিক নির্দেশ করে।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা নূর মোহাম্মদ নিজ প্রচেষ্টায় সংকরায়ণের মাধ্যমে বিভিন্ন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। কৃষিবিজ্ঞানের ওপর তার গভীর গবেষণার ফলেই তিনি আজ কৃষিবিজ্ঞানী হিসেবেও পরিচিত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাও তার কাজকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছেন।
মূলত খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে কম সেচে বেশি ফলনের উপযোগী ধানের জাত উদ্ভাবনই ছিল তার গবেষণার লক্ষ্য। বর্তমানে তিনি আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমের উপযোগী প্রায় ২০০টি কৌলিক সারি তৈরি করেছেন। এসব সারি দ্রুত বড় হয়, কম সময়ে ফলন দেয়, সুগন্ধিযুক্ত, চিকন এবং খরার প্রতিও সহনশীল।
২০০৫ সালে কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। এছাড়া গত বছর নভেম্বরে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন তিনি।
গেল ৭ মে তানোর উপজেলার কৃষি পরিষেবা ফার্মের গবেষণা প্লটে ‘নূর ধান-২’-এর ফলন মাপা হয়। ধান মাড়াইয়ের পর বিঘাপ্রতি পাওয়া গেছে ২৬ মণ ধান এবং ১৬.৬ মণ চাল। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ছিল ১১৩ সেন্টিমিটার, কুশির সংখ্যা গড়ে ১১টি এবং ছড়ার দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২৬ সেন্টিমিটার। এক হাজার পরিপুষ্ট দানার ওজন হয়েছে ১২.৭০ গ্রাম এবং ধানের জীবনকাল ছিল ১৪০ দিন।
এই ধান কাটার সময় উপস্থিত ছিলেন তানোরের ইউএনও লিয়াকত সালমান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম, এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন।
নূর মোহাম্মদের ভাষ্যমতে, আমন মৌসুমে বিঘাপ্রতি ফলন ছিল ১৯ মণ, তবে বোরো মৌসুমে ফলন হয়েছে আরও বেশি। রাজশাহী ছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মাগুরা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার ও খুলনায় অনেক কৃষক এই ধান চাষ করে সন্তুষ্ট হয়েছেন।
নূরের মতে, এই ধানের গাছ মজবুত হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে সহজে ভেঙে পড়ে না। এছাড়া রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কম। এমনকি টানা ১৫-২০ দিন সেচ বা বৃষ্টিবিহীন অবস্থায়ও ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, “এই চাল অত্যন্ত সরু এবং মানের দিক থেকেও জিরা জাতের চালের চেয়ে উন্নত।”
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page