মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জনের যতো অনিয়ম-দুর্নীতি এর খুঁটির জোর কোথায়
ক্রাইম রিপোর্টারঃ
কী পাওয়া যায় মুন্সীগঞ্জে।বদলী ঠেকিয়ে দিলেন হাইকোর্টে রিট করে।আদালত থেকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে থাকার আদেশ নিয়ে আসলেন।আর এই নিয়ে চলছে নানা রসালো আলোচনা।কেন তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হলো মুন্সীগঞ্জে থাকতে?হাইকোর্টে রিট করে বিভাগীয় শহরে বদলী ঠেকিয়ে ছোট একটা জেলায় থাকতে হলো কেন? কী স্বার্থ আছে মুন্সীগঞ্জে? তবে কি সামনে বিশাল জনবল নিয়োগকে কেন্দ্র করে তিনি মুন্সীগঞ্জে রয়ে গেলেন।এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে।এই পিআরএল-এ থাকা কর্মকতা সিভিল সার্জনের খুঁটির জোর কোথায়? বিগত সরকারের সময়ে আওয়ামীলীগে সক্রিয় বলে নানা সুবিধা নেওয়া এই সিভিল সার্জন এখনও বহাল তবিয়তে।এই সিভিল সার্জন আদালতে রিট করে তার বদলির আদেশ ঠেকিয়েছেন।অভিযোগ রয়েছে নিয়োগের বড় বাণিজ্য করতে সিভিল সার্জন আদালতের মাধ্যমে তার বদলির আদেশ ঠেকিয়ে দিয়েছেন।মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।সুনির্দিষ্ট এই অভিযোগে দেখা যায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৪৩ টাকা অনিয়মের অডিট আপত্তি রয়েছে তার বিরুদ্ধে।এই সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের অটির বখশিসের টাকা থেকে ভাগ নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।এমনকি হাসপাতালের ক্রয়কৃত ওষুধও শর্ট ডেটের ক্রয় করেছেন স্বপ্ল মূল্যে এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকে।যার মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সিভিল সার্জন ও অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেট মিজানের মাধ্যমে।সুপারিশে বলা হয়েছে আপত্তি সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ২০২৩-২০২৪ সালের এই অডিট আপত্তি নিয়ে এই উর্ধ্বতন মহলের চিঠি চালাচালি চলছে।এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন আলোচনা চলছে।২০২৪ সালের ৭ জুলাই তার বদলির আদেশ আসে।তাকে মুন্সীগঞ্জ থেকে খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ের(স্বাস্থ্য) সহকারী পরিচালক(প্রশাসক)পদে বদলি করা হয়। একই সাথে নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা:সাজেদা খানমকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।ডা.সাজেদা খানম সে সময় মুন্সীগঞ্জে সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিতে আসলে চাতুরতার সাথে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন তার কাছ থেকে সময় নিয়ে যোগদানের জন্য একটি তারিখ বলেন। তারিখের আগেই তিনি হাইকোর্টে গিয়ে একটি রিট দায়ের করেন।মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার মঞ্জুরুল আলম হাইকোর্টে রিট করে তার বদলির আদেশ স্থগিত করিয়েছেন।রিট করে তিনি আদালত থেকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে থাকার আদেশ নিয়ে আসেন।এদিকে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে বদলী হয়ে আসার পর যোগদান করতে না পারা ডা.সাজেদা খানম দুঃখ করে জানান,তাঁর স্বামীর মৃত্যুতে মানবিক কারণে তিনি ঢাকার আশপাশে আসার আবেদন করেন।তার আবেদন মঞ্জুরের পরও তিনি যোগদান করতে পারেননি।যোগদানের জন্য তার থেকে সময় নিয়ে পরে রিট করে বসেন।পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন হিসেবে বদলী করে।
পিআরএল-এ থাকা সিভিল সার্জন অফিসের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর গাজী মোহাম্মদ আমীনকে বেআইনীভাবে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ও হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলম।তবে সিভিল সার্জন মঞ্জুরুল আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এ ধরণের কোন নিয়োগ আমি দেইনি।কাগজ থাকলে সেটি ভুয়া হতে পারে।তবে গাজী মোহাম্মদ আমীন সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলম কর্তৃক নিয়োগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান,স্যানিটারী ইন্সপেক্টর এর পিআরএলকালীন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক ও হিসাবরক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে,সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ কমিটিতে না থাকলেও সিভিল সার্জনের পক্ষে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রায় সব কাজই করছেন গাজী মোহাম্মদ আমীন।প্রার্থী যাচাই বাছাইসহ নানা কাজে ব্যস্ত তিনি।আগামী মে মাসে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৪২ পদে নিয়োগ হতে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জনে।২০২৫ সালের ১১ জুলাই সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলমের পিআরএল এ যাওয়ার কথা রয়েছে।তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিয়োগ সম্পন্ন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি।তবে কোন প্রকার নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত না থাকার দাবি করে সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলম বলেন, “আমি নিয়োগ কমিটির কেউ না আমি একজন মেম্বার মাত্র।কিন্তু সিভিল সার্জন অফিসের নিয়ন্ত্রাধীন রাজস্ব খাতের এই নিয়োগ কমিটির সব কাজই করছে তার দপ্তর।মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলমের বিরুদ্ধে ১৪ লাখ টাকার অডিট আপত্তি ওঠে।তিনি মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক থাকা অবস্থায় ‘৪র্থ স্বাস্থ্য,জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি(৪ঃয ঐচঘঝচ)আইডিএ ক্রেডিট নং-৬১২৭ বিডির আওতায় স্বাস্থ্য অডিট অধিদফতর কর্তৃক নিরীক্ষিত ২০২৩-২৪ চূড়ান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আপত্তি করা হয়।অডিট রিপোর্টে বলা হয়,আপত্তি সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। অডিটের ১৯৩ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ৬ লাখ ১০ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ১৯৪ নম্বর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫ শ' টাকা অনিয়ম রয়েছে।অডিট সুপারিশে বলা হয়েছে আপত্তি সংক্রান্ত অর্থ সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করা প্রয়োজন এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।৪র্থ স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি আইডিএ ক্রেডিট নং ৬১২৭ বিডির আওতায় স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তর কর্তৃক নিরীক্ষিত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের চূড়ান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের উঠে এসেছে সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলম হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক থাকা অবস্থায় অনিয়মের নানা বিষয়।
হাসপাতালটির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা.আহমেদ কবির জানান,এই আপত্তির সুরাহা না হলে অভিযুক্তের পেনশন থেকে টাকা কর্তন হবে।সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুরুল আলম বলেন,অফিসে গিয়ে বদলি আটকাতে গেলে দেরি হয়ে যেতো।তাছাড়া আমার চাকুরীর মেয়াদ অল্প সময় থাকায় একইস্থানে আমার থাকার আইনগত অধিকার আছে।তাই আদালতে যেতে হয়েছে।অপরদিকে নিয়োগ বানিজ্য করার কোন ইচ্ছা আমার নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমার থাকা অবস্থায় যাতে কোন নিয়োগ না হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেব।আমি যতদিন মুন্সীগঞ্জে আছি ততদিন এই নিয়োগ করতে দেব না।এই বদনাম নিতে আমি রাজি না।তিনি আরো বলেন,অডিট অবজেকশন হয়।এটা আমরা জবাব দিবো তখন শেষ হয়ে যাবে।অবজেকশনের জবাব দেব তখন বিষয়টি শেষ হয়ে যাবে।মিজানের স্বর্ণচোরাচালানি মামলায় জেল খেটে এসেছেন এ বিষয়ে বলেন এটা মিজানের বিষয়।গাজী আমিনের বিষয়ে তিনি বলেন,তার জায়গায় নতুন লোক চলে আসছে।নিয়োগ বানিজ্য হলে প্রমাণিত হলে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে।নিয়োগ এখনো কোথায়?সেখানে কিভাবে নিয়োগ বানিজ্য হবে।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page