অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিন এশিয়ার শক্তিশালী রাষ্ট্র সিংগাপুর ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সূচকে। সাম্প্রতিক জরিপে জাপানকে পিছনে ফেলে তাদের পাসপোর্টের মর্যাদা বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানে। এতেই বুঝা যায় তারা উন্নত দেশের সব সূচকে কতটা অগ্রসরমান!
গত সপ্তাহে অষ্ট্রেলিয়া হতে ফেরার পথে দু'দিন অবস্থান করলাম সিংগাপুরের সেরাংগুন এলাকার পাঁচতারকা নভোটেল হোটেলে। মাল্টিকালচারাল এরিয়া হিসেবে এ এলাকাটি অধিকতর পরিচিত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় প্রচুর বাংলাদেশী লোকজনের দেখা মিলল। সিংগাপুরে দক্ষ, অদক্ষ ও পেশাজীবি মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক বাংলাদেশীর বসবাস। মোট জনসংখ্যা সিংগাপুরে ৭০ লক্ষের মত। সে হিসেবে বাংলাদেশী কমিউনিটি একেবারে কম নয় বলা যায়। রোববারের ছুটির দিনে মোস্তফা শপিং সেন্টারের আশেপাশে বাংলাদেশীদের এক মিলনমেলা বসে। দেশীয় সকল পণ্যের পসরা বসিয়ে ঢাকাইয়া ষ্টাইলে বেচাকেনা করে বাংলাদেশী ছোট বড় ব্যবসায়ীরা। পান বিড়ি সিগারেট শুটকি মাছ হতে মাঝারি শিল্প পণ্য সবই পাওয়া যায় সহজে। মনেই হয় না এ জায়গাটি সিংগাপুরের। বাংলাদেশী হোটেল রেস্তোরাঁ গ্রোসারী মিলিয়ে যেন এক টুকরো বাংলাদেশে রুপ নেয় রোববার দিন।
সিংগাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসরত আমার এক কাজিন ও তার ব্যবসায়ী স্বামী শামীমের সহযোগিতায় শুক্র ও শনিবার কাটালাম সাগরের কোলঘেষে নবনির্মিত ফরেষ্ট অঞ্চল চাংগি ভিলেজ, ম্যারিনা বে স্যান্ডস, গার্ডেন্স বাই দ্যা বে ও ত্রিভুজ টাওয়ার। এছাড়া সিংগাপুরের আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো (এমআরটি) দেখতে চলে গেলাম মেরিনা বে স্যান্ডস হতে আশেপাশের কয়েকটি পাতাল ষ্টেশনে। সিংগাপুরে উপরে যতলোক যাতায়াত করে তার দ্বিগুন কিংবা ততোধিক লোক আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোতে চলাচল করে। এমআরটি যেন আরেক বিষ্ময়। শপিং সেন্টার, বানিজ্যিক অফিস হতে শুরু করে ভিন্ন এক জগত রয়েছে সিংগাপুরের পাতালে। আমি এবারই প্রথম সিংগাপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ড পরিদর্শন করলাম। শতাধিক আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো ষ্টেশন রয়েছে বর্তমানে। অদূর ভবিষ্যতে আরো শতাধিক ষ্টেশন তৈরী করে সমগ্র সিংগাপুরকে এক মাকড়সার জালের ন্যায় বিস্তৃত করা হচ্ছে। এত ছোট দেশ কিন্তু উন্নত বড় দেশকেও যেন হার মানাচ্ছে সিংগাপুর তার আধুনিকতার ছোঁয়ায়। কি নেই সিংগাপুরে? ফরমুলা ওয়ান এর ন্যায় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও সফল আয়োজন করে এত স্বল্প পরিসরে। পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অফশোর ব্যাংকিং, শিপিং ও এয়ারলাইন্স সেবায় বিশ্বের সেরাদের তালিকায় সিংগাপুরের নাম সর্বাগ্রে। এসবই সম্ভব হয়েছে দেশাত্ববোধ, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কড়া আইন শৃংখলা পরিপালনের মাধ্যমে।
জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক চাইনীজ বংশোদ্ভূত, সিকি ভাগ মালয়ী ও তামিল আর বাকীরা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমঅধিকার ভোগ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছে যা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সিংগাপুরে কর্মরত আমার আরেক স্নেহাস্পদ ছোট ভাই মোশাররফের সার্বিক সান্নিধ্য পেয়ে রোববার দিনটিও ভালভাবে কাটালাম। মুদ্রা সংগ্রাহক হওয়ায় আমার শখের মানুষটিকে পেয়ে অর্ধবেলা অতিবাহিত করলাম নিউম্যাসমিটিক প্লেস হিসেবে খ্যাত চায়না টাউন সংলগ্ন পিপলস পার্ক সেন্টারে। সিংগাপুরের প্রচলিত বর্ণিল কাগুজে ও ধাতব মুদ্রার পাশাপাশি অন্যান্য দেশেরও কিছু দুর্লভ ব্যাংকনোট ও কয়েনের সন্ধান পেয়ে আমার সংগ্রহের ভান্ডার আরো সম্মৃদ্ধ করে নিলাম। প্রিয় অনুজ মোশাররফকে বিশেষ ধন্যবাদ আমার শখ পূরনে উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। উপরন্তু তার মাধ্যমে জানার ও দেখার সুযোগ হল বাংলাদেশী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর অবৈধ অর্থ পাচারের মাধ্যমে সিংগাপুরে বিনিয়োগকৃত সুউচ্চ বানিজ্যিক ভবন ও ব্যবসায়িক স্থাপনা। তার মধ্যে অর্থ কেলেংকারীতে সেরা এস. আলম গ্রুপের দশ হাজার কোটি টাকার পাচারকৃত অর্থে নির্মিত Centrium Square আর সামিট গ্রুপের আজিজ খানের টেলিকম টাওয়ার যা সিংগাপুরে বিদেশী নাগরিক দ্বারা বৈদেশিক অর্থায়নে নির্মিত অন্যতম সেরা স্থাপত্য। এছাড়া আরো অনেক বাংলাদেশীর পাচারকৃত কালো অর্থের বিনিয়োগ আছে সিংগাপুরে। এস. আলম ও সামিট গ্রুপের স্থাপনা দেখে আফসোস হল এটা ভেবে যে সিংগাপুরে তাদের এ বিনিয়োগে বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয় অর্থনৈতিক ভাবে। নানা ছলচাতুরী ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের দেশীয় সম্পদ ও আমজনতার প্রদত্ত করের অর্থ তারা এমনভাবে পাচার করল বিদেশে যা সত্যিই বেদনাদায়ক।
যাহোক এমন ভাবনা ক্ষনিকের জন্য মনকে বেদনাতুর করে রাখলেও পরক্ষনে সিংগাপুরের চাকচিক্য দেখে যেন ভুলে বসতে বসেছি সবকিছু। সংক্ষিপ্ত দু'দিনের সফরে অনেক নতুনত্বই চোখে পড়ল যা বরাবরই পড়ে সিংগাপুরে এলে। ছোট্ট এ দেশটি ক্রমাগত উন্নতির এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যাকে বলা যায় Maximum Threshold Level. এখন তাদের প্রয়োজন Sustainable Development Policy বজায় রেখে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ।
দু'দিনের ট্রানজিটে সিংগাপুর:
অর্থনৈতিকভাবে দক্ষিন এশিয়ার শক্তিশালী রাষ্ট্র সিংগাপুর ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সূচকে। সাম্প্রতিক জরিপে জাপানকে পিছনে ফেলে তাদের পাসপোর্টের মর্যাদা বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানে। এতেই বুঝা যায় তারা উন্নত দেশের সব সূচকে কতটা অগ্রসরমান!
গত সপ্তাহে অষ্ট্রেলিয়া হতে ফেরার পথে দু'দিন অবস্থান করলাম সিংগাপুরের সেরাংগুন এলাকার পাঁচতারকা নভোটেল হোটেলে। মাল্টিকালচারাল এরিয়া হিসেবে এ এলাকাটি অধিকতর পরিচিত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনি ও রবিবার হওয়ায় প্রচুর বাংলাদেশী লোকজনের দেখা মিলল। সিংগাপুরে দক্ষ, অদক্ষ ও পেশাজীবি মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক বাংলাদেশীর বসবাস। মোট জনসংখ্যা সিংগাপুরে ৭০ লক্ষের মত। সে হিসেবে বাংলাদেশী কমিউনিটি একেবারে কম নয় বলা যায়। রোববারের ছুটির দিনে মোস্তফা শপিং সেন্টারের আশেপাশে বাংলাদেশীদের এক মিলনমেলা বসে। দেশীয় সকল পণ্যের পসরা বসিয়ে ঢাকাইয়া ষ্টাইলে বেচাকেনা করে বাংলাদেশী ছোট বড় ব্যবসায়ীরা। পান বিড়ি সিগারেট শুটকি মাছ হতে মাঝারি শিল্প পণ্য সবই পাওয়া যায় সহজে। মনেই হয় না এ জায়গাটি সিংগাপুরের। বাংলাদেশী হোটেল রেস্তোরাঁ গ্রোসারী মিলিয়ে যেন এক টুকরো বাংলাদেশে রুপ নেয় রোববার দিন।
সিংগাপুরে স্থায়ীভাবে বসবাসরত আমার এক কাজিন ও তার ব্যবসায়ী স্বামী শামীমের সহযোগিতায় শুক্র ও শনিবার কাটালাম সাগরের কোলঘেষে নবনির্মিত ফরেষ্ট অঞ্চল চাংগি ভিলেজ, ম্যারিনা বে স্যান্ডস, গার্ডেন্স বাই দ্যা বে ও ত্রিভুজ টাওয়ার। এছাড়া সিংগাপুরের আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো (এমআরটি) দেখতে চলে গেলাম মেরিনা বে স্যান্ডস হতে আশেপাশের কয়েকটি পাতাল ষ্টেশনে। সিংগাপুরে উপরে যতলোক যাতায়াত করে তার দ্বিগুন কিংবা ততোধিক লোক আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোতে চলাচল করে। এমআরটি যেন আরেক বিষ্ময়। শপিং সেন্টার, বানিজ্যিক অফিস হতে শুরু করে ভিন্ন এক জগত রয়েছে সিংগাপুরের পাতালে। আমি এবারই প্রথম সিংগাপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ড পরিদর্শন করলাম। শতাধিক আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো ষ্টেশন রয়েছে বর্তমানে। অদূর ভবিষ্যতে আরো শতাধিক ষ্টেশন তৈরী করে সমগ্র সিংগাপুরকে এক মাকড়সার জালের ন্যায় বিস্তৃত করা হচ্ছে। এত ছোট দেশ কিন্তু উন্নত বড় দেশকেও যেন হার মানাচ্ছে সিংগাপুর তার আধুনিকতার ছোঁয়ায়। কি নেই সিংগাপুরে? ফরমুলা ওয়ান এর ন্যায় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও সফল আয়োজন করে এত স্বল্প পরিসরে। পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অফশোর ব্যাংকিং, শিপিং ও এয়ারলাইন্স সেবায় বিশ্বের সেরাদের তালিকায় সিংগাপুরের নাম সর্বাগ্রে। এসবই সম্ভব হয়েছে দেশাত্ববোধ, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কড়া আইন শৃংখলা পরিপালনের মাধ্যমে।
জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক চাইনীজ বংশোদ্ভূত, সিকি ভাগ মালয়ী ও তামিল আর বাকীরা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমঅধিকার ভোগ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলেছে যা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সিংগাপুরে কর্মরত আমার আরেক স্নেহাস্পদ ছোট ভাই মোশাররফের সার্বিক সান্নিধ্য পেয়ে রোববার দিনটিও ভালভাবে কাটালাম। মুদ্রা সংগ্রাহক হওয়ায় আমার শখের মানুষটিকে পেয়ে অর্ধবেলা অতিবাহিত করলাম নিউম্যাসমিটিক প্লেস হিসেবে খ্যাত চায়না টাউন সংলগ্ন পিপলস পার্ক সেন্টারে। সিংগাপুরের প্রচলিত বর্ণিল কাগুজে ও ধাতব মুদ্রার পাশাপাশি অন্যান্য দেশেরও কিছু দুর্লভ ব্যাংকনোট ও কয়েনের সন্ধান পেয়ে আমার সংগ্রহের ভান্ডার আরো সম্মৃদ্ধ করে নিলাম। প্রিয় অনুজ মোশাররফকে বিশেষ ধন্যবাদ আমার শখ পূরনে উপযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। উপরন্তু তার মাধ্যমে জানার ও দেখার সুযোগ হল বাংলাদেশী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর অবৈধ অর্থ পাচারের মাধ্যমে সিংগাপুরে বিনিয়োগকৃত সুউচ্চ বানিজ্যিক ভবন ও ব্যবসায়িক স্থাপনা। তার মধ্যে অর্থ কেলেংকারীতে সেরা এস. আলম গ্রুপের দশ হাজার কোটি টাকার পাচারকৃত অর্থে নির্মিত Centrium Square আর সামিট গ্রুপের আজিজ খানের টেলিকম টাওয়ার যা সিংগাপুরে বিদেশী নাগরিক দ্বারা বৈদেশিক অর্থায়নে নির্মিত অন্যতম সেরা স্থাপত্য। এছাড়া আরো অনেক বাংলাদেশীর পাচারকৃত কালো অর্থের বিনিয়োগ আছে সিংগাপুরে। এস. আলম ও সামিট গ্রুপের স্থাপনা দেখে আফসোস হল এটা ভেবে যে সিংগাপুরে তাদের এ বিনিয়োগে বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হয় অর্থনৈতিক ভাবে। নানা ছলচাতুরী ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের দেশীয় সম্পদ ও আমজনতার প্রদত্ত করের অর্থ তারা এমনভাবে পাচার করল বিদেশে যা সত্যিই বেদনাদায়ক।
যাহোক এমন ভাবনা ক্ষনিকের জন্য মনকে বেদনাতুর করে রাখলেও পরক্ষনে সিংগাপুরের চাকচিক্য দেখে যেন ভুলে বসতে বসেছি সবকিছু। সংক্ষিপ্ত দু'দিনের সফরে অনেক নতুনত্বই চোখে পড়ল যা বরাবরই পড়ে সিংগাপুরে এলে। ছোট্ট এ দেশটি ক্রমাগত উন্নতির এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যাকে বলা যায় Maximum Threshold Level. এখন তাদের প্রয়োজন Sustainable Development Policy বজায় রেখে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page