গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই টানাপোড়েনে সীমান্তেও দেখা দিয়েছে কিছুটা উত্তেজনা।
এমন অবস্থায় সীমান্তে ভারতের দখলে থাকা ৫ কিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করে নিজেদের দখলে নিয়েছে। তবে এমন খবরকে “ভিত্তিহীন” বলে দাবি করেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর ভারতের অন্তর্গত ৫ কিলোমিটার জমির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এমন প্রতিবেদনকে “ভিত্তিহীন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে মঙ্গলবার প্রত্যাখ্যান করেছে বিএসএফ।
এক বিবৃতিতে বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার বলেছে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের একটি অংশে প্রকাশিত এই ধরনের প্রতিবেদনে “সত্য ও যোগ্যতার” অভাব রয়েছে।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকের রাংঘাট গ্রামের ভারতের দিকের এলাকাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেখানে কোদালিয়া নদী বরাবর আন্তর্জাতিক সীমানা (আইবি) রয়েছে এবং ওই নদীর উভয় পাশে রেফারেন্স পিলারের মাধ্যমে সেটি ভালোভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানকার আন্তর্জাতিক সীমানা এবং বিএসএফের ডিউটি প্যাটার্ন কয়েক দশক ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে।”
বিজিবি সদস্যরা গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে মোটরচালিত নৌকা এবং এটিভি ব্যবহার করে ওই এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল দিচ্ছে বলে যে দাবি সামনে এসেছে, বিএসএফের বিবৃতিতে সেটিও অস্বীকার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে, “এই প্রতিবেদনগুলো ‘মনগড়া গল্প’ ছাড়া আর কিছুই নয়। বিএসএফ এবং বিজিবি নদীর নিজ নিজ তীরে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক সীমানা (আইবি) হিসাবে কাজ করে।
বিএসএফ দাবি করেছে, ওই এলাকাটি বেষ্টনীবিহীন এবং চোরাচালান ও অনুপ্রবেশের ঝুঁকিপূর্ণ। এই ধরনের কার্যকলাপ রোধ করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এতে করে এই অঞ্চলে অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা নগণ্য মাত্রায় নেমে এসেছে।
ভারতের এই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দাবি, “ভারতীয় ভূখণ্ডের এক ইঞ্চিও প্রতিপক্ষের দ্বারা অধিগ্রহণ করা হয়নি বা হবেও না। বিএসএফ এবং বিজিবি উভয়ই ‘ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নির্দেশিকা, ১৯৭৫’ অনুসারে তাদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে, যাতে সীমান্তের অখণ্ডতা নিশ্চিত করা যায়।”
বিএসএফ বলেছে, “এই ধরনের মিথ্যা এবং বানোয়াট দাবি শুধুমাত্র দুই সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সদ্ভাবকে নষ্ট করবে।
স্বাধীনতার পর থেকেই কোদলা নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের ওই অংশ ভারতের বিএসএফ দখল করে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ৫৮ বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, কোদালিয়া নদী বাংলাদেশের অভ্যন্তর হতে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হয়ে মহেশপুরের মাটিলা এলাকায় ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চিহ্নিত করেছে। ১৯৬১ সালে প্রণীত বাংলাদেশ-ভারত (স্টিপ ম্যাপ সিট নম্বর-৫১) মানচিত্র অনুসারে কোদলা নদীর উল্লিখিত ৪.৮ কিলোমিটার নদী সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখার অভ্যন্তরে অবস্থিত।
বিজ্ঞপ্তি থেকে আরও জানা যায়, সম্প্রতি কোদালিয়া নদীর প্রকৃত মালিকানা-সংক্রান্ত এই বিষয়টি ৫৮ বিজিবির নজরে আসে। এরপর বিজিবি প্রথমে বিভিন্ন নথিপত্র স্থানীয় প্রশাসন ও মানচিত্র থেকে নদীটির প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করে বিএসএফের অবৈধ আধিপত্য বিস্তারের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পরে ৫৮ বিজিবির সদস্যরা সাহসিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কোদালিয়া নদী নিজেদের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে বিজিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার জন্য যন্ত্রচালিত বোট এবং নদীর পাড়ে দ্রুত টহলের জন্য অল টেরেইন ভেহিকেল (এটিভি) বরাদ্দ করা হয়েছে।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page