নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এবার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাম-লী।
বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এবার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টাম-লী। অনুমোদিত খসড়ায়ও সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো পুলিশের কোনো ধরনের পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের পূর্ণ ক্ষমতা বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। এতে আপত্তি তুলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর মাধ্যমেও পুলিশি হয়রানির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। যদিও পুলিশের বক্তব্য হলো অধ্যাদেশের বিধান অনুসরণ করেই তদন্ত, তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের প্রাথমিক খসড়া বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত সাতটি ধারা বাদ দেয়া হয়েছে। ধারাগুলো ছিল- মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দ-; পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ; আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি; অনুমতি ব্যতীত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দ-; মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার। আগের আইনের সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বিধান নতুন অধ্যাদেশে রাখা হয়নি। এছাড়া বাদ পড়েছে ক্ষমতা অপর্ণ, সাক্ষ্যগত মূল্য ও অসুবিধা দূরীকরণ শীর্ষক ধারাগুলোও।
তবে নতুন এ আইনে পুলিশের ক্ষমতা আগের মতোই রাখা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ৩৬-এর ১ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার এমন বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকে যে কোথাও এ অধ্যাদেশে বর্ণিত কোনো অপরাধ কোথাও সংঘটিত হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাহলে তিনি এমন বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করে ওই স্থানে প্রবেশ করে তল্লাশি চালাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে পারবেন। তল্লাশি চালানোর সময় অপরাধে ব্যবহৃত কম্পিউটার, সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য-উপাত্ত সরঞ্জাম এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক দলিল জব্দ করতে পারবেন। তথ্যপ্রমাণ নষ্টের আশঙ্কা আছে এমন বিশ্বাস করার কোনো কারণ থাকলেও তল্লাশি, গ্রেফতার ও জব্দের জন্য পুলিশের কোনো পরোয়ানার দরকার পড়বে না। ধারাটিতে সংশ্লিষ্ট স্থানে উপস্থিত যে কারো দেহ তল্লাশি এবং উপস্থিত যে কাউকে সন্দেহবশত গ্রেফতারের সুযোগ রাখা হয়েছে।
এর আগে রহিত হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনেও পুলিশকে একই ধরনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এ অপরাধের আওতায় ব্ল্যাকমেইলিং (প্রতারণা) ও অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশসংক্রান্ত অপরাধ ও দ- নতুন করে যুক্ত হয়েছে। খসড়ায় যে কারো মামলা করার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরাসরি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা তার নিয়োগকৃত ব্যক্তি অথবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাদে অন্য কেউ এ আইনের অধীনে মামলা করতে পারবেন না। আগের আইনে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিসহ অন্য যে কারো মামলা করার সুযোগ ছিল। সে সময় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাদের অবমাননার অভিযোগ তুলে রাজনৈতিকভাবে অত্যুৎসাহী অনেকেই এর অপপ্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খসড়া অধ্যাদেশের ধারা ৮-এ বলা আছে, ডিজিটাল কিংবা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক সেসব অপসারণ অথবা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে যদি বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে ডিজিটাল কিংবা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের অথবা কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকা-, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে কিংবা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা অপসারণ বা ব্লক করার জন্য মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page