ভারতবর্ষের বিশিষ্ট ওলী, চিশতীয়া তরীক্বার বিশিষ্ট বুযূর্গ হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিছাল শরীফের পূর্বে উনার আল-আওলাদ ও বিশিষ্ট খলীফাদেরকে অসিয়ত মুবারক করলেন যে-
“আমার বিছাল শরীফের পর তোমরা যাকে-তাকে দিয়ে আমার জানাযার নামায পড়াবে না। আমার জানাযার নামায পড়াবে ওই ব্যক্তিকে দিয়ে যে ব্যক্তির মধ্যে নিম্নোক্ত ৪টি গুণ পাওয়া যাবে। আর যদি এ ৪টি গুণ কোনো ব্যক্তির জীবনে পাওয়া না যায়; তবে বিনা জানাযায় আমার লাশ দাফন করবে। কোনো অবস্থাতেই আমার এ অসিয়ত মুবারকের ব্যত্যয় ঘটাবে না। ”
হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অসিয়ত মুবারক অনুযায়ী উনার জানাযার নামাযের ইমামতি করার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির যে ৪টি গুণ থাকতে হবে- তা হলো:
- যে ব্যক্তি জীবনে কোনোদিন তাকবীরে উলা ব্যতীত নামায পড়েননি;
- যে ব্যক্তি জীবনে কোনোদিন তাহাজ্জুদের নামায কাযা করেননি;
- যে ব্যক্তি জীবনে কোনোদিন পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দেননি;
- যে ব্যক্তি জীবনে কোনোদিন আছরের সুন্নত নামায কাযা করেননি;
এর কিছুদিন পর হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর উনার জানাযা প্রস্তুত করে বিশাল একটি ময়দানে খাটিয়া আনা হলো। সেখানে উল্লেখিত ৪টি শর্ত উল্লেখ করে বারবার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিলো- “যিনি বা যারা এ গুণাগুণের অধিকারী; উনারা হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জানাযার নামায পড়ানোর জন্য সামনে এগিয়ে আসুন। ”
ময়দান ভর্তি লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ নেই। চারদিকে নীরব-নিস্তব্ধ। এতো অনেক বড় গুণের কথা! এ গুণ অর্জন করা কি সহজ ব্যাপার? সারা মাঠের লোকগুলো নিজেদের অপরাধী মনে করে নীরবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। বারবার ঘোষণা দেয়ার পরও বিশাল ময়দান থেকে কোনো প্রতি উত্তর না আসায় হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল-আওলাদ, খলীফা, ছাত্রসহ শুভাকাক্সক্ষীরা বিনা জানাযায় হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দাফনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন।
আল-আওলাদ, খলীফা, শুভাকাক্সক্ষীরা উনাকে বিনা জানাযায় দাফন করার জন্য রওয়ানা হবেন- এমন মুহূর্তে সামনের কাতার থেকে এক ব্যক্তি অত্যন্ত দ্রুত ক্বদম বাড়িয়ে কফিনের উপর হাত লাগিয়ে বললেন- “থামুন! জানাযার নামায আমিই পড়াবো। ” এ ব্যক্তি কোনো আলিম নন, তবে সাধারণ মানুষও নন। তিনি হলেন- দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুবহানাল্লাহ!
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কফিনের সামনে গিয়ে কাফন সরিয়ে হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কপাল মুবারকে চুমু খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন; “ওগো আমার প্রিয় শায়েখ! আপনি সারা জীবন নিজের আমল গোপন করে গোপনেই চলে গেলেন। আর আমার আমলগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিলেন। ” (সূত্র: উলামায়ে হিন্দকা শানদার মাজি)
-মুহম্মদ শাহজালাল।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page