ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা দল ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে এমন প্রস্তাব দিচ্ছে, যার মধ্যে ইউক্রেনকে একটি বড় অংশ রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হবে। রয়টার্সের বিশ্লেষণ ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারে এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ভূখণ্ড ছাড়তে হলেও, দেশটি ন্যাটো সদস্যপদ পাবে না—এমনটি স্পষ্ট হয়েছে।
ট্রাম্পের রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলোগ ও ট্রাম্পের শীর্ষ তিন উপদেষ্টার দেয়া প্রস্তাবগুলোতে অনেকটা একমত দেখা গেছে। তাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম, ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্য হওয়ার সুযোগ না দেয়া। তারা মস্কো-কিয়েভ আলোচনায় আনার জন্য ‘ক্যারট অ্যান্ড স্টিক’ নীতি অনুসরণ করতে চান, অর্থাৎ কিয়েভ যদি আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে, তাহলে পশ্চিমা সহায়তা বন্ধ করা হবে; অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি আলোচনায় রাজি না হন, তাহলে ইউক্রেনে সাহায্য আরো বাড়ানো হবে।
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার সময় বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে—এমনকি সম্ভব হলে তার আগেই—তিন বছর ধরে চলা এই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে কীভাবে তা করবেন, তা এখনো পরিষ্কার করেননি।
বিশ্লেষক এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই জটিল সংঘাতের কারণে ট্রাম্পের পক্ষে এমন প্রতিশ্রুতি পূরণ করা কঠিন। তবে তাঁর উপদেষ্টাদের বক্তব্যগুলো একত্রে বিবেচনা করলে ট্রাম্পের সম্ভাব্য শান্তি পরিকল্পনার কাঠামো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি—যিনি জনবলসংকট এবং ক্রমবর্ধমান ভূখণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি—ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যদিও তিনি এখনো ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আগ্রহী, তবে এই সপ্তাহে তিনি বলেছেন, দখলকৃত কিছু অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে।
বিশ্লেষকরা এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের জন্য পুতিনকে আলোচনায় রাজি করানো কঠিন হতে পারে, কারণ পুতিন ইউক্রেনকে চাপ দিতে এবং নতুন ভূখণ্ড দখল করতে আগ্রহী থাকতে পারেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রাশিয়া বিষয়ক সাবেক শীর্ষ বিশ্লেষক ইউজিন রুমার বলেন, পুতিনের কোনো তাড়া নেই। যতক্ষণ না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে এবং চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অংশ হিসেবে মেনে না নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত পুতিন যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত নন। তিনি আরো বলেন, পুতিন সম্ভবত সময় নিয়ে আরও ভূখণ্ড দখল করবেন এবং ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় দেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন।
এছাড়া, রয়টার্সের মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পুতিন একটি সমঝোতার যুদ্ধবিরতিতে যেতে প্রস্তুত, তবে ইউক্রেনকে হারানো ভূখণ্ড ফেরত দেওয়া হবে না। কিয়েভ এবং পশ্চিমা বিশ্ব যদি সমঝোতায় না আসে, তাহলে তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
রাশিয়া ২০১৪ সাল থেকেই ইউক্রেনের কাছ থেকে দখলে নিয়ে পুরো ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ছাড়া, দেশটি ইউক্রেনের দনবাসের প্রায় ৮০ শতাংশ—যা দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে গঠিত এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭০ শতাংশেরও বেশি, পাশাপাশি মাইকোলাইভ ও খারকিভের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
ট্রাম্প এখনো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে কোনো কার্যকর কমিটি গঠন করেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাম্পের চার উপদেষ্টা জানিয়েছেন, একটি শান্তিচুক্তি অনেকটাই নির্ভর করবে ট্রাম্প, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার ওপর।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘পরিকল্পনার সামগ্রিক ধারণা না পেয়ে পৃথক বিবৃতি নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’
ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বমঞ্চে শান্তি পুনঃস্থাপন এবং আমেরিকার শক্তি ও প্রতিরোধ ক্ষমতা পুনর্গঠনে যা প্রয়োজন তা করবেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করা এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন—বর্তমানে তিনটি প্রধান প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব কেলোগের, একটি নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের এবং ট্রাম্পের সাবেক ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান রিচার্ড গ্রেনেলের একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব।
ট্রাম্পের নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সেপ্টেম্বরে একটি ভিন্ন প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, একটি চুক্তিতে সম্ভবত বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সীমারেখায় একটি নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা রাশিয়ার আরো আগ্রাসন প্রতিরোধে সুরক্ষিত থাকবে। তার প্রস্তাবেও ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে।
জার্মানিতে ট্রাম্পের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড গ্রেনেল জুলাইয়ে ব্লুমবার্গের গোলটেবিল বৈঠকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ‘স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল’ তৈরির পরামর্শ দিয়েছিলেন, তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page