বাংলাদেশকে প্রথম টেস্টে ২০১ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের বোলাররা তো চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজদের বোলিংয়ে একটু হলেও চাপে পড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিং দুটিই একসঙ্গে ‘ক্লিক’ খুব কম সময়েই করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হতাশ করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
টেস্টে এক ইনিংসে পাঁচ কিংবা তার বেশি উইকেট নেওয়া যে কোনো বোলারের জন্য কৃতিত্বের। অ্যান্টিগা টেস্টের চতুর্থ দিন এই গৌরবের অধিকারী হয়েছেন তাসকিন আহমেদ।গত পরশু তার মুকুটে নতুন পালক যোগ হওয়ার পর তাসকিন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি আমার জন্য বিশেষ কিছু। টেস্টে এই প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলাম। এর আগে কাছাকাছি গিয়েও পাঁচ উইকেট পাইনি। প্রথম ইনিংসে বল করে শিখেছি, লাইন ও লেন্থ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দুদিনের তুলনায় বাতাসের বেগ ছিল প্রবল। বাতাসের প্রচণ্ড বেগের দরুন বাড়তি বাউন্স পেয়েছি।’ কিন্তু তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কোনো মূল্যই দেননি তার সতীর্থ ব্যাটাররা। চতুর্থদিনে ৩১ ওভারে ১০৯ তুলতেই সাত উইকেট হারিয়ে অ্যান্টিগা টেস্টে নিজেদের হার ডেকে আনেন। তাসকিন বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাটারদের কাছ থেকে আরও খানিকটা প্রতিরোধ আশা করেছিলাম। তবে ওরা খুব ভালো বোলিং করেছে। আশা করি, পরের টেস্টে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’ দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ৩০ নভেম্বর জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে শুরু হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস মাত্র ১৫২ রানে বলতে গেলে একাই গুটিয়ে দিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ডান-হাতি পেসার তাসকিন ছয় উইকেট নিয়েছেন ৬৪ রান দিয়ে। কিন্তু তার এই কৃতিত্ব ম্লান হয়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ৩৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে আগেরদিন ১০৯ রানে সাত উইকেট হারিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজরা আমন্ত্রণ জানান পরাজয়কে। কাল শেষদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ৩৮ ওভারে বাংলাদেশকে ১৩২ রানে অলআউট করে। ২০১ রানের পরাজয়ে দুই মাচের সিরিজে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ল ১-০তে।
৯ উইকেটে ২৬৯ রানে বাংলাদেশ তাঁদের প্রথম ইনিংসের খেলা ঘোষণা করেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও সফরকারীদের ৯ উইকেট পড়তেই খেলা শেষ। তবে এবার বাংলাদেশ করতে পারেনি প্রথম ইনিংসের অর্ধেক রানও। বাংলাদেশকে ২০১ রানে হারিয়ে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট জ্যামাইকায় শুরু হবে ৩০ নভেম্বর।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেটে ১০৯ রানে আজ পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষ হতে সময় লেগেছে ৭ ওভার। ৯ উইকেটে ১৩২ রানে থেমে যায় বাংলাদেশ। সফরকারীদের ইনিংসের শেষ ভাগে ঘটেছে ‘অদ্ভুত’ এক ঘটনা। ৩৮তম ওভারের শেষ বলে জেইডেন সিলসের বলে সংযোগ ঘটাতে পারেননি তাসকিন। তবু দৌড় শুরু করেন তাসকিন ও শরীফুল ইসলাম। স্ট্রাইকপ্রান্তে শরীফুল পৌঁছানোর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটরক্ষক জোশুয়া ডা সিলভা বল ছুঁড়লেও স্টাম্প বরাবর সেটা লাগাতে পারেননি। এরপরই ফিজিও আসেন শরীফুলকে দেখতে। ব্যাটিং করার মতো অবস্থায় তিনি না থাকায় খেলা এখানেই শেষ হয়ে যায়। কারণ, শরীফুল এর আগে আলজারি জোসেফের বাউন্সারে আঘাত পেয়েছিলেন।
এর আগে অ্যান্টিগায় টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মিরাজ। টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৫০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। মিকাইল লুইস (৯৭) ও অ্যালিক আথানাজ (৯০) নড়বড়ে ৯০-এর ঘরে আউট হলেও টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন জাস্টিন গ্রিভস। ২০৬ বলে ৬ চারে ১১৫ রান করেন গ্রিভস।
আলজারি জোসেফের বাউন্সারে কাঁধে চোট পেয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার শরীফুল ইসলাম। সেখানেই ম্যাচের সমাপ্তি। তার আগে জোসেফই ফেরান আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার হাসান মাহমুদ ও জাকের আলীকে। জাকের করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান। সর্বোচ্চ ৪৫ রান আসে অধিনায়ক মিরাজের ব্যাট থেকে। তিনটি করে উইকেট নেন কেমার রোচ ও জেডেন সিলস। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির সুবাদে ম্যাচসেরা জাস্টিন গ্রিভস।
প্রতিটি পরাজয়ের পর হতাশা একপাশে সরিয়ে রেখে প্রাপ্তি খোঁজার প্রবণতা অনেকটা নিজেদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো। স্যার ভিভ রিচার্ডসের দেশে রোচদের বোলিং তোপে উড়ে যাওয়ার পর মনকে প্রবোধ দেওয়ার মতো দুটি কারণই খুঁজে পাওয়া যায়। এক, টেস্ট পঞ্চমদিনে নিয়ে যাওয়া। দুই, বাংলাদেশের ১৯তম বোলার হিসাবে ইনিংসে তাসকিনের পাঁচ উইকেট পাওয়া। নিজের ১৬তম টেস্টে এই প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেলেন তাসকিন। তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে সাকিব আল হাসান (১৯ বার), তাইজুল ইসলাম (১৪) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (১০)। মোহাম্মদ রফিক সাতবার এবং শাহাদাত হোসেন চারবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page