দেশের ৭টি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তবে কাগজে-কলমে শুধুই সংরক্ষিত, বাস্তবায়ন নেই। নেই সীমানাপ্রাচীর। বনের পাশে যাঁদের জমি রয়েছে, তাঁদের অনেকেই বনের জমি দখল করে রেখেছেন। অনেকে আবার বনের জমি দখল করে গড়েছেন বাগান। বন বিভাগ এসব জায়গা উদ্ধারে অভিযান চালায়। তবে সীমানার চিহ্ন না থাকায় বাধাগ্রস্ত হয় উদ্ধারকাজ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন ১ হাজার ২৫০ হেক্টর। তবে বাস্তবে কতটুকু আছে, জানেন সেখানকার বন বিভাগের কর্মকর্তারা। ১৯৯৬ সালে এই বনকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এখনো ভূমি জরিপ হয়নি। ফলে কতখানি জায়গা দখল হয়েছে এবং কতটুকুতে বন আছে, সেই হিসাব নেই বন বিভাগের
গত রোববার সকালে বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ও থানা-পুলিশ কমলগঞ্জে বেসরকারি সংস্থা হীড বাংলাদেশের স্থাপনার পশ্চিমে বেদখল হওয়া প্রায় ৪ একর জমি উদ্ধার করেছে। এর আগে পৃথক অভিযানে বেদখল হওয়া আরও ৬ একর জমি উদ্ধার করা হয়। তবে সীমানা চিহ্নিত না থাকায় উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভূমি পরিমাপ করার জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সর্বশেষ অভিযান প্রসঙ্গে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ৪ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এই জমি বদরুল আলম জেনার নামের একজনের দখলে ছিল। আমরা জমি উদ্ধার করে গাছ লাগিয়েছি। এর আগে আমরা আরও প্রায় ৬ একর জমি উদ্ধার করেছি।’ তিনি বলেন, লাউয়াছড়া বনের পাশে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থাকায় বনের জমির সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বনের সীমানা নির্ধারণ করা হলে জমি উদ্ধার করা সহজ হবে।
জীববৈচিত্র্যের দিক থেকে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। এ বনে স্তন্যপায়ী আছে নানা প্রজাতির। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। তবে বনের সীমানা না থাকায় এর সংরক্ষণকাজ মাঝেমধ্যে বাধাগ্রস্ত হয়। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পরিবেশকর্মী মো. আহাদ মিয়া বলেন, বনের জায়গা অনেকেই দখল করে বিভিন্ন বাগান করেছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সঙ্গেও বনের জায়গা দখলে আছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সীমানা নির্ধারণ না থাকায় সহজে জায়গা দখল হচ্ছে। দ্রুত সময়ে উদ্যানের জায়গা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
এদিকে বনের জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের সঙ্গে রয়েছে যোগাযোগহীনতা। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান জরিপ করার জন্য আমরা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। কিছুদিন আগে আবার চিঠির উত্তরের জন্য রিভিউ পাঠিয়েছি। তবে তাদের কাছ থেকে এখনো কোনো উত্তর আসেনি।’
সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মো. এমরান হোসেন বলেন, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিমাপের জন্য আমাদের সিলেট অফিসে কোনো চিঠি আসেনি। বন বিভাগ থেকে চিঠি হয়তো ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি লাউয়াছড়া বনের জায়গা জরিপ করার জন্য আমাদের কাছে ২০২৩ সালে একটা চিঠি দিয়েছেন।’
অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে সীমানা নির্ধারণের কাজ।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page