পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ডাকাতি বেড়ে গেছে। এমনটাই অভিযোগ রাজধানীর বাসিন্দাদের। শুধু বাড়িতে নয়, রাস্তায়ও বেড়েছে ডাকাতি। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যেকটি বাড়িতে লাঠি সংগ্রহে রাখতে বলেছে ধানমন্ডি সোসাইটি। ঢাকাসহ সারাদেশেই হঠাৎ করেই চুরি, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় নাকাল অবস্থা দেশের সাধারণ মানুষের। এসব অপরাধ হচ্ছেও নানা অভিনব পদ্ধতিতে। শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকছে ডাকাত দল।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে বিনা নিমন্ত্রণে আসে একদল ডাকাত। যদিও সেনাবাহিনী ও পুলিশের তৎপরতায় ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরো চার-পাঁচ জন পালিয়ে গেছে। এর কিছুদিন আগে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে ঢুকে ৬০ ভরি স্বর্ণ ৭৫ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি করতে গিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে।
অনেক এলাকায় পুলিশকে বারবার ফোন করা হলেও ঠিকভাবে সাড়া দিচ্ছে বলে না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। কেন পুলিশ সাড়া দিচ্ছে না? জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মইনুল হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফোন করার পরও পুলিশ সাড়া দেয়নি এমন সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে তিনি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। মইনুল হাসান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে টহল বাড়িয়েছি। কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই শৈথিল্য মেনে নেয়া হবে না। ইতিমধ্যে চেকপোস্টও বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে দুর্গাপূজায় পুলিশের নিরবচ্ছিন্ন তদারকির কারণে রাজধানীতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রত্যেকটি ঘটনায় তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, আসামিও ধরা হচ্ছে।
যৌথবাহিনী সূত্র জানা গেছে, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে ধানমন্ডির ১৩ নম্বর সড়কের ১৩/এ নম্বর বাড়িতে আসে কিছু যুবক। তারা নিজেদের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা বাড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এ সময় তারা বাড়ির কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নানকে মারধর করে। আশপাশের বাড়ির লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে ধানমন্ডি থানায় ফোন করে। কিন্তু প্রথমদিকে পুলিশ সাড়া দেয়নি। পরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে খবর দেয়া হলে সেনাসদস্যরা সেখানে হাজির হন। এ সময় বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়া ১৩ জনকে সেনাসদস্যরা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঐ মামলায় ধরা পড়া ১৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির তদন্ত করছেন থানার এসআই সাবরিন হায়দার শুভ। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পাশের ক্যাম্প থেকে পুলিশ সেখানে গিয়ে বাড়ির গেট বন্ধ করে দেয়। এ কারণে ডাকাতরা বের হতে পারেনি। পরে আরো পুলিশ সেখানে যায়, সেনাসদস্যরাও তখন সেখানে আসে। পুলিশ সাড়া দেয়নি এমন অভিযোগ ঠিক নয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধানমন্ডি সোসাইটি বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। সোসাইটির এক বার্তায় বলা হয়েছে, পটপরিবর্তনের পর দেশব্যাপী চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি বহুমাত্রায় বেড়ে গেছে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ও বুধবার ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল হানা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ধানমন্ডিবাসীকে সতর্ক থেকে এবং অন্যান্য ফ্ল্যাট ও পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে সৌহার্দমূলক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও লাঠিসোঁটা সংগ্রহে রাখুন, প্রতিবেশীর মোবাইল ফোন নম্বর রাখুন। এরা বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার বেশে কখনো আদমশুমারির লোক, কখনো টিকা বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোক পরিচয় দিয়ে বাসাবাড়িতে ঢুকে ডাকাতি সংঘটিত করছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ধানমন্ডি সোসাইটির নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে গত বুধবার জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা একটি গ্রামে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে ঘর তল্লাশি করার নামে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, বেলা দেড়টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে চার জন জাকারিয়ার বাড়ির ফটকের কাছে আসেন। অপরিচিত ঐ ব্যক্তিরা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে জাকারিয়ার বাড়ির ভেতরে ঢোকেন। তাদের কাছে হাতকড়া ও রিভলভার ছিল। জাকারিয়ার ঘরে মাদক আছে বলে তারা তল্লাশি করতে চান। এ সময় তারা জাকারিয়ার ও তার পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে সবাইকে বাড়ির ভেতর এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখেন। সেখানে এক জন তাদের পাহারা দিচ্ছিলেন। ২০-২৫ মিনিট পর তারা ঘর থেকে বেরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান। জাকারিয়া ও তার পরিবারের লোকজন ঘরে ঢুকে আলমারির ড্রয়ার খোলা দেখতে পান। ড্রয়ারের ভেতরে টাকা ও স্বর্ণালংকার নেই। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন।
এর আগে গত রবিবার(২৭ অক্টোবর) দুপুরে মিরপুর ডিওএইচএসে ফরাহ দিবা (৬০) নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যার পর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মিরপুর ডিওএইচএসের একটি ভবনের তৃতীয় তলার নিজ ফ্ল্যাটে স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন ঐ নারী। দুপুরের দিকে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঐ সময় বাসায় কেউ ছিল না। পরে পরিবারের সদস্যরা বাসায় এসে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ জানায়, ঐ ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় দেড় লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাড়ির কেয়ারটেকার ও তাদের গাড়িচালক পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এছাড়াও গত ১৮ অক্টোবর ঢাকার দোহারে একটি বিয়েবাড়িতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি হয়েছে। বাড়ির মালিকের দাবি, প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টাকাসহ মোট ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে ডাকাতরা।
গত ২০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়াড়ে অঞ্জলি রানী বিশ্বাস (৫৫) নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে অঞ্জলিকে গলা কেটে হত্যার পর নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়ে যায়।
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page