
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার দুপুর দুইটার দিকে ‘লং মার্চ’ নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে যান সাকিব আল হাসান ভক্তরা। তাদের দাবি ছিল, সাকিব যেন দেশের মাটিতে অবসর নিতে পারেন। মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে অবসর নিতে চেয়েছিলেন সাকিব।
তাকে রেখে স্কোয়াডও ঘোষণা করা হয়। এরপর তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন ‘মিরপুরের ছাত্রজনতার প্রতিনিধি’ দাবি করা একটি পক্ষ। পরবর্তীতে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সাকিবকে বাদ দেওয়া হয়, দেশে আসতেও নিষেধ করা হয়।

আর এতেই সাকিবভক্তরা ক্ষোভে জ্বলে ওঠে। আন্দোলন শুরু করেন তারা। গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) জড়ো হয়েছিলেন তারা। সে সময় ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
আজ রোববার দুপুরে আবারও তারা জড়ো হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। দুই নম্বর গেটের সামনে যেতে চাইলেও তাদের বাধা দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা।
একপর্যায়ে তারা ‘কানপুর নাকি মিরপুর, মিরপুর মিরপুর’, ‘তুমি কে, আমি কে; সাকিবিয়ান, সাকিবিয়ান’- এমন স্লোগান দিতে দিতে এক নম্বর গেটের দিকে পিছিয়ে আসেন। এ সময়ই সাবিকবিরোধী চার-পাঁচজন লাঠি ও বাঁশ হাতে তাদেরকে ধাওয়া দেন। কয়েকজন সাকিবভক্তকে তারা মারধরও করার খবর পাওয়া যায়। জানা গেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে সাকিব আল হাসানকে রেখে স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দেশের বিমানও ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানায় দেশের ক্রিকেট সমর্থকগোষ্ঠীর একটি অংশ। ওই পরিস্থিতিতে সবুজ সংকেত না পেয়ে দুবাই থেকে ফিরে যান বাংলাদেশের বাঁহাতি অলরাউন্ডার। তাকে বাদ দিতে বাধ্য হন নির্বাচকরা। এর পরদিন সাকিবকে ফেরানোর দাবিতে মিরপুরে স্টেডিয়ামের সামনে বিক্ষোভ করেন তার সমর্থকগোষ্ঠী। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ এবার রূপ নিলো সহিংসতায়।
গত কয়েক দিন ধরেই সাকিবভক্ত এবং তার বিরোধীরা বিক্ষোভ করেন মিরপুরে স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে। প্রথম টেস্টের আগের দিন রোববার যেন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেলেন তারা। দুই পক্ষের হাতাহাতি শেষ পর্যন্ত মারামারিতে রূপ নিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়।
সাকিব ভক্তদের দাবি, দেশের হয়ে অনেক সম্মান বয়ে এনেছেন সাকিব। তাকে তাই দেশের মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। সাকিবের এক ভক্ত বলেছেন, ‘সাকিবকে এই টেস্ট খেলতে দিতে হবে। যেকোনো মূল্যে আজই সাকিবকে দেশে ফিরিয়ে এনে ঢাকা টেস্টে মাঠে নামার সুযোগ করে দিতে হবে। আমাদের দাবি এটাই।’
এদিকে সাকিবভক্তদের আন্দোলন চলাকালে তার বিরোধীরাও স্লোগান দিতে থাকেন। তারা প্রধান ফটকের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্টেডিয়ামে থাকা সেনাবাহিনী এবং পুলিশ স্টেডিয়ামে অবস্থান করছিল। ফলে শখানেক সাকিবভক্তের জন্য স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এই সময় হুট করেই অবস্থান কর্মসূচি চলার এক পর্যায়ে বাঁশ ও লাঠি নিয়ে কয়েকজন লোক এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলার পর তারা স্টেডিয়ামের দুই নম্বর মোড়ের দিকে যেতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতিহত করে বিপরীত দিক দিয়ে ধাওয়া দেয়। তাদেরকে লাঠিপেটাও করা হয়। এতে করে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় সাকিবভক্তদের। এক নারী আহতও হয়েছেন।
সাকিবের নারী ভক্ত মাহফুজা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। আমাদের দাবি জানাচ্ছিলাম। অথচ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতিতে হুট করে কয়েকজন এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা হামলাকারীদের প্রতিহত না করে উল্টো আমাদেরকেও ধাওয়া দিয়েছে।’
এদিকে সাকিবভক্তরা ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর তার বিরোধীরা মিছিল শুরু করতে দেখা গেছে। তারা সাকিবের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। তাদের একজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাকিবের মতো ক্রিকেটার আমাদের দরকার নাই। দেশে যখন মানুষ মরছিল, সাকিব তখন ঘুরে বেড়িয়ে আমাদের সঙ্গে মজা নিচ্ছিল। বাংলাদেশের মানুষের আবেগ নিয়ে সে খেলা করেছে। তাকে আর জাতীয় দলের জার্সিতে আমরা দেখতে চাই না।’
প্রসঙ্গত, গত ভারত সফরে কানপুর টেস্টের আগে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। তিনি জানান, নিরাপত্তা দিলে শেষ টেস্টটা খেলতে চান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে। বিসিবি সভাপতি শুরুতে নিরাপত্তার আশ্বাস না দিলেও পরে তাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন। সাকিবকে রেখেই ঘোষিত হয় প্রথম টেস্টের দল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশের পথে রওনাও দেন সাকিব। কিন্তু দুবাই আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফিরতে নিষেধ করা হয়। এ কারণে সাকিব পরবর্তীতে আর দেশে ফেরেননি।