

রমজান মাস মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকতের মাস। এই মাসে আত্মশুদ্ধি, ইবাদত-বন্দেগি এবং তাকওয়া অর্জনের জন্য প্রতিটি মুমিনের উচিত সঠিকভাবে রোজা পালন করা। কোরআন ও হাদিসের আলোকে একজন রোজাদারের করণীয় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. রোজার নিয়ত ও গুরুত্ব
নবী করিম (সা.) বলেছেন:

“নিশ্চয়ই কর্মসমূহ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।” (সহিহ বুখারি: ১)
রমজানের রোজা রাখা ফরজ ইবাদত, যা কোরআনে বলা হয়েছে:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সুরা আল-বাকারা: ১৮৩)
২. সাহরি ও ইফতারের গুরুত্ব
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“সাহরিতে বরকত রয়েছে, তাই তোমরা সাহরি খাও।” (সহিহ বুখারি: ১৯২৩)
এছাড়াও ইফতার সময় দ্রুত ইফতার করা সুন্নত। তিনি বলেছেন:
“মানুষ যতক্ষণ ইফতারে দেরি না করবে, ততক্ষণ তারা কল্যাণে থাকবে।” (সহিহ বুখারি: ১৯৫৭)
৩. রোজার আদব ও করণীয়
- ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া: কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, জিকির ও নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া।
- বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা: রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ ত্যাগ করতে পারে না, তবে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই যে সে খাবার ও পানীয় ত্যাগ করলো।” (সহিহ বুখারি: ১৯০৩)
- রাগ ও ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা: রাসুল (সা.) বলেছেন, “রোজা হল ঢাল, তাই রোজাদার যদি কারও সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে, ‘আমি রোজাদার’।” (সহিহ বুখারি: ১৮৯৪)
৪. তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের তারাবিহ নামাজ আদায় করে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি: ২০০৮)
৫. দান-সদকা ও জাকাত প্রদান
রাসুল (সা.) ছিলেন রমজানে সবচেয়ে বেশি দানশীল।
“রাসুল (সা.) ছিলেন দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উদার, আর রমজানে তাঁর উদারতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেত।” (সহিহ বুখারি: ৬)
৬. লাইলাতুল কদরের সন্ধান
রমজানের শেষ দশ রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেছেন,
“লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সুরা আল-কদর: ৩)
৭. রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ থেকে বাঁচা
- ইচ্ছাকৃতভাবে খাওয়া-দাওয়া ও পান করা।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।
- শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা।
উপসংহার
রমজান আত্মশুদ্ধির মাস, যা আমাদের তাকওয়া অর্জনে সহায়তা করে। তাই আমাদের উচিত এই মাসকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো, গুনাহ থেকে বিরত থাকা, ইবাদতে সময় দেওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট থাকা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাস যথাযথভাবে পালনের তাওফিক দান করুন, আমিন।