
“গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বার্তা পাঠিয়ে তা জানানো হয়েছে।
নোয়াখালিতে পুলিশ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা এলো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার পর প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ হত্যা বা থানায় হামলার ঘটনায় এখন কি পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করবে? পুলিশ হত্যায় যদি কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে তাদের স্বজনরা বিচার পাবেন কী?
৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় হামলা করা হয়, ৪ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার পর থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। থানায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় কনস্টেবল আব্দুল মজিদকে। সেই হত্যার ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ি থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন কনস্টেবল আব্দুল মজিদের স্ত্রী শাহজাদী বেগম। এখনো মামলাটির তদন্ত শুরু হয়নি।
দুই ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে নীলফামারিতে বাবার বাড়িতে আছেন শাহজাদী বেগম। টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে, তাদের নিয়ে বহু রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। অথচ যেসব পুলিশ ভাইয়েরা মারা গেলেন, তাদের নিয়ে কোনো রিপোর্ট হচ্ছে না। আমার স্বামী আন্দোলনে কোনো ডিউটি করেনি। তিনি থানাতেই ছিলেন। ৫ আগস্ট থানায় ঢুকে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি নিজে এই ঘটনায় একটি মামলা করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।”
“দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। না পুলিশের কর্মকর্তা, না সরকারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কেউ সান্ত্বনা পর্যন্ত দিতে আসেনি,” বলেন শাহজাদী বেগম। তিনি বলেন, “ওই সময় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের কত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, অথচ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। কনস্টেবলরা তো উপরের স্যারদের নির্দেশ পালন করেছেন। এই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার লোকজনই মারা গেছেন। কোনো সিনিয়র অফিসার তো মারা যাননি! অথচ আমরা এখন অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। আমার স্বামীর আরো ১৪-১৫ বছর চাকরি ছিল। আমি চাই, সেই পর্যন্ত যেন আমাদের বেতন আর রেশন দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিহত সব পুলিশ সদস্যের পরিবারের থাকার একটা ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।”
যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই মামলার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে ৫ আগস্টের আগে দুইজন পুলিশ https://p.dw.com/p/4lnaZ
নিহত ৪৪ পুলিশ সদস্যের স্বজনরা কি বিচার পাবেন?
সমীর কুমার দে ঢাকা2 ঘণ্টা আগে2 ঘণ্টা আগে
“গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বার্তা পাঠিয়ে তা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নোয়াখালিতে পুলিশ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা এলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার পর প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ হত্যা বা থানায় হামলার ঘটনায় এখন কি পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করবে? পুলিশ হত্যায় যদি কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে তাদের স্বজনরা বিচার পাবেন কী করে বা তারা আদৌ বিচার পাবেন কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে।
৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় হামলা করা হয়, ৪ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার পর থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। থানায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় কনস্টেবল আব্দুল মজিদকে। সেই হত্যার ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ি থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন কনস্টেবল আব্দুল মজিদের স্ত্রী শাহজাদী বেগম। এখনো মামলাটির তদন্ত শুরু হয়নি।
দুই ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে নীলফামারিতে বাবার বাড়িতে আছেন শাহজাদী বেগম। টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে, তাদের নিয়ে বহু রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। অথচ যেসব পুলিশ ভাইয়েরা মারা গেলেন, তাদের নিয়ে কোনো রিপোর্ট হচ্ছে না। আমার স্বামী আন্দোলনে কোনো ডিউটি করেনি। তিনি থানাতেই ছিলেন। ৫ আগস্ট থানায় ঢুকে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি নিজে এই ঘটনায় একটি মামলা করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।”
আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি: শাহজাদী

03:24
“দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। না পুলিশের কর্মকর্তা, না সরকারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কেউ সান্ত্বনা পর্যন্ত দিতে আসেনি,” বলেন শাহজাদী বেগম। তিনি বলেন, “ওই সময় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের কত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, অথচ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। কনস্টেবলরা তো উপরের স্যারদের নির্দেশ পালন করেছেন। এই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার লোকজনই মারা গেছেন। কোনো সিনিয়র অফিসার তো মারা যাননি! অথচ আমরা এখন অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। আমার স্বামীর আরো ১৪-১৫ বছর চাকরি ছিল। আমি চাই, সেই পর্যন্ত যেন আমাদের বেতন আর রেশন দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিহত সব পুলিশ সদস্যের পরিবারের থাকার একটা ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।”
যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই মামলার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে ৫ আগস্টের আগে দুইজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছিল। ওই মামলা দু’টি পুলিশ বাদি হয়ে করেছিল। সেখানেও আসামী হিসেবে কারো নাম উল্লেখ ছিল না। তবে বিএনপি-জামায়াতের অজ্ঞাত নেতা-কর্মীদের আসামী করা হয়েছিল। ওই মামলা দু’টি ইতিমধ্যে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গত শনিবার ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নাইম হোসেন (২১), ইমাম হোসেন ওরফে ইমন (২২) ও নাহিদুল ইসলাম (১৬)। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এই তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ গ্রেপ্তারের পক্ষে বললেও অধিকাংশই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছোঁড়েন অনেকেই।
সোনাইমুড়ীতে তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো.আবদুল্লাহ আল ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “টিকটকে পুলিশের অস্ত্র নিয়ে একজনের ছবি পোস্ট করা দেখে এলাকার মানুষই পুলিশকে খবর দেয়। তখন অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ নিতে নাইম হোসেনকে আমরা থানায় ডেকে আনি। কারণ, এখনও নোয়াখালীতে ২৯টি লুটকৃত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চাইনিজ রাইফেল, পিস্তল, শর্টগান। নাইমের কাছে আমরা অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাই। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি নিজে থানায় হামলা, লুটপাট ও পুলিশ হত্যায় নিজের সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেন। আর তার কাছে থাকা অস্ত্রটি আগেই থানায় জমা দিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ঘটনার সময় তার সঙ্গে ইমাম হোসেন ও নাহিদুলের জড়িত থাকার কথা আমাদের জানান। তখন আমরা ওই দু’জনকে গ্রেপ্তার করি। ইমামের কাছ থেকে আমরা নিহত পুলিশ কনস্টেবলের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করি। তার মোবাইল ফোনে পুলিশ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভয়েস রেকর্ড পাওয়া যায়। তারা তিনজন আদালতে বিচারকের সামনে থানায় হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।”
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট বিকেলে সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) গলা কেটে এবং একজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।”
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে এসব পুলিশ সদস্য মারা যান। ৪৪ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ পুলিশ সদস্য মারা যান ৫ আগস্ট। আগের দিন ৪ আগস্ট মারা যান ১৫ জন। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই দু’জন, ২১ জুলাই এক ও ১৪ আগস্ট এক পুলিশ সদস্য মারা যান। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ২১ জন মারা গেছেন কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্য। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় ১১ জন উপ-পরিদর্শক, ৮জন সহকারী উপপরিদর্শক , ৩ জন পরিদর্শক ও একজন নায়েক রয়েছেন। একক থানা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায়।
নিহত ৪৪ পুলিশ সদস্যের স্বজনরা কি বিচার পাবেন?
সমীর কুমার দে ঢাকা2 ঘণ্টা আগে2 ঘণ্টা আগে
“গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।” স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বার্তা পাঠিয়ে তা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নোয়াখালিতে পুলিশ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা এলো।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার পর প্রশ্ন উঠেছে পুলিশ হত্যা বা থানায় হামলার ঘটনায় এখন কি পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করবে? পুলিশ হত্যায় যদি কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে তাদের স্বজনরা বিচার পাবেন কী করে বা তারা আদৌ বিচার পাবেন কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছে।
৫ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় হামলা করা হয়, ৪ জন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার পর থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। থানায় দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় কনস্টেবল আব্দুল মজিদকে। সেই হত্যার ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ি থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন কনস্টেবল আব্দুল মজিদের স্ত্রী শাহজাদী বেগম। এখনো মামলাটির তদন্ত শুরু হয়নি।
দুই ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে নীলফামারিতে বাবার বাড়িতে আছেন শাহজাদী বেগম। টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “আন্দোলনের সময় যেসব ছাত্র-জনতার মৃত্যু হয়েছে, তাদের নিয়ে বহু রিপোর্ট পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। অথচ যেসব পুলিশ ভাইয়েরা মারা গেলেন, তাদের নিয়ে কোনো রিপোর্ট হচ্ছে না। আমার স্বামী আন্দোলনে কোনো ডিউটি করেনি। তিনি থানাতেই ছিলেন। ৫ আগস্ট থানায় ঢুকে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি নিজে এই ঘটনায় একটি মামলা করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।”
আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি: শাহজাদী

03:24
“দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। না পুলিশের কর্মকর্তা, না সরকারের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কেউ সান্ত্বনা পর্যন্ত দিতে আসেনি,” বলেন শাহজাদী বেগম। তিনি বলেন, “ওই সময় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের কত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, অথচ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের কেউ খোঁজও নিচ্ছে না। কনস্টেবলরা তো উপরের স্যারদের নির্দেশ পালন করেছেন। এই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার লোকজনই মারা গেছেন। কোনো সিনিয়র অফিসার তো মারা যাননি! অথচ আমরা এখন অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি। আমার স্বামীর আরো ১৪-১৫ বছর চাকরি ছিল। আমি চাই, সেই পর্যন্ত যেন আমাদের বেতন আর রেশন দেওয়া হয়। পাশাপাশি নিহত সব পুলিশ সদস্যের পরিবারের থাকার একটা ব্যবস্থা যেন সরকার করে দেয়।”
যাত্রাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফারুক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এই মামলার তদন্ত চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে ৫ আগস্টের আগে দুইজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছিল। ওই মামলা দু’টি পুলিশ বাদি হয়ে করেছিল। সেখানেও আসামী হিসেবে কারো নাম উল্লেখ ছিল না। তবে বিএনপি-জামায়াতের অজ্ঞাত নেতা-কর্মীদের আসামী করা হয়েছিল। ওই মামলা দু’টি ইতিমধ্যে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
৫ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গত শনিবার ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নাইম হোসেন (২১), ইমাম হোসেন ওরফে ইমন (২২) ও নাহিদুল ইসলাম (১৬)। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এই তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ গ্রেপ্তারের পক্ষে বললেও অধিকাংশই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছোঁড়েন অনেকেই।
সোনাইমুড়ীতে তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো.আবদুল্লাহ আল ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “টিকটকে পুলিশের অস্ত্র নিয়ে একজনের ছবি পোস্ট করা দেখে এলাকার মানুষই পুলিশকে খবর দেয়। তখন অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ নিতে নাইম হোসেনকে আমরা থানায় ডেকে আনি। কারণ, এখনও নোয়াখালীতে ২৯টি লুটকৃত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে চাইনিজ রাইফেল, পিস্তল, শর্টগান। নাইমের কাছে আমরা অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাই। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি নিজে থানায় হামলা, লুটপাট ও পুলিশ হত্যায় নিজের সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেন। আর তার কাছে থাকা অস্ত্রটি আগেই থানায় জমা দিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে ঘটনার সময় তার সঙ্গে ইমাম হোসেন ও নাহিদুলের জড়িত থাকার কথা আমাদের জানান। তখন আমরা ওই দু’জনকে গ্রেপ্তার করি। ইমামের কাছ থেকে আমরা নিহত পুলিশ কনস্টেবলের ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করি। তার মোবাইল ফোনে পুলিশ হত্যার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক ভয়েস রেকর্ড পাওয়া যায়। তারা তিনজন আদালতে বিচারকের সামনে থানায় হামলা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।”
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট বিকেলে সোনাইমুড়ী থানায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার সময় পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) গলা কেটে এবং একজন কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।”
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে এসব পুলিশ সদস্য মারা যান। ৪৪ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ পুলিশ সদস্য মারা যান ৫ আগস্ট। আগের দিন ৪ আগস্ট মারা যান ১৫ জন। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই দু’জন, ২১ জুলাই এক ও ১৪ আগস্ট এক পুলিশ সদস্য মারা যান। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ২১ জন মারা গেছেন কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্য। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের তালিকায় ১১ জন উপ-পরিদর্শক, ৮জন সহকারী উপপরিদর্শক , ৩ জন পরিদর্শক ও একজন নায়েক রয়েছেন। একক থানা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায়।
নিউজে দেখেছি মামলা হয়েছে: মাউনজেরা

02:11
ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের কারো কারো লাশ গলায় রশি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়, কারো লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পুলিশের একজন কর্মকর্তা বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলাটির তদন্ত করছেন থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এস এম কামাল। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “এই মামলায় এখনো আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি।” তবে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন ইয়াজদানি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “এজাহারে ৪ জন আসামীর নাম উল্লেখ আছে। বাকিরা অজ্ঞাত। নাম উল্লেখ থাকা ৪ জনই বর্তমানে পলাতক। ফলে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।”
এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের ছোট বোন মাউনজেরা খাতুন আলিফ ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, “আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার মা ৪ বছর ধরে শয্যাশায়ী। তাকে কেউ সান্ত্বনা পর্যন্ত দিতে আসেনি। বরং আমরাই থানায় অনেকবার যোগাযোগ করেছি, পোস্টমর্টেম রিপোর্টের জন্য। কিন্তু এখনো পাইনি।”
চার ভাই আর চার বোনের মধ্যে আব্দুল রাজ্জাক ছিলেন সবার বড়। স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ায় তার কোনো সন্তান নেই। মাউনজেরা খাতুন আলিফ বলেন, “আমি তো ঢাকায় থাকি, ফলে জানি না, পরিবারের উপর কোনো চাপ আছে কিনা৷”
তবে ৪৪ জন পুলিশ হত্যার ঘটনায় কতগুলো মামলা হয়েছে বা কতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন সে ব্যাপারে সোমবার বিকেলে ডয়চে ভেলেকে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাতে পারেননি পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর।
সুত্র: ডয়েচ ভেলে