
আইওএফ সিন্ডিকেট
৬০০ কোটি টাকা লুটের নেপথ্যে সালমান এফ রহমান!
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের অনুমোদিত রাজস্ব ফাঁকির মডেল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটর ফোরাম (আইওএফ)। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সিন্ডিকেটটি বছরের পর বছর সরকারকে রাজস্ববঞ্চিত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিদেশ থেকে টেলিফোন কল আনতে গঠিত এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সালমান এফ রহমান। তার প্রতিষ্ঠানের নামে আইওএফ-এর ফান্ড থেকে লুট করেছেন ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) অনুমোদনে চালু হয় আইওএফ। বলা হয়েছিল, বৈধ ফোনকল আদান-প্রদানে শৃঙ্খলা আনা ও রাজস্ব ফাঁকি রোধই এর মূল লক্ষ্য। তবে বাস্তবে এ প্ল্যাটফরম তৈরি করে মাত্র ৭টি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরকে (আইজিডব্লিউ) কল টার্মিনেট করার একচেটিয়া সুবিধা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল বাজার নিয়ন্ত্রণ করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। বাড়ানো হয় কলরেট। তবুও সরকার, মোবাইল অপারেটর বা আইসিএক্স কোনো বাড়তি রাজস্ব পায়নি। বরং বাড়তি অর্থ চলে যায় আইওএফ সিন্ডিকেটের হাতে।
আন্তর্জাতিক কল নিয়ন্ত্রণের জন্য গড়ে ওঠা কমন ইন্টারন্যাশনাল পয়েন্ট (সিআইপি) ও কল আদান-প্রদানের একচেটিয়া ব্যবস্থা শুধু একটি গোষ্ঠীর ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি প্রশস্ত করেছে রাজস্ব আত্মসাতের পথ।
আইওএফ-এর মাধ্যমে সুবিধাভোগী সেই সাত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশনস, রুটস কমিউনিকেশনস, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম ও বাংলা ট্র্যাক। এর মধ্যে গ্লোবাল ভয়েসের সঙ্গে সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান এফ রহমানের জড়িত থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ আছে, কল বণ্টনে অনিয়ম ও প্রকৃত দর গোপন করে সরকারের বিপুল রাজস্ব ফাঁকির নেপথ্যে ছিল এ আইওএফ চক্র। এর মূল কৌশল ছিল আন্তর্জাতিক কলের একটি অংশ থেকে প্রাপ্ত ৪ শতাংশ অর্থ মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এমডিএস) নামে এক ফান্ডে জমা করা, যেটির প্রায় পুরোটাই গেছে সালমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে।
যুগান্তরের হাতে আসা আইওএফ-এর ব্যাংক স্টেটমেন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আইজিডব্লিউ খাতসংশ্লিষ্ট ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এক্সপেন্স’-এর নামে ফান্ডে জমা হয় ৬৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি অর্থই খরচ হয়েছে বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেডের নামে। অথচ বিটিআরসির আইজিডব্লিউ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নেই এই প্রতিষ্ঠানের নাম। এমনকি ৬২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে, যার প্রায় শতভাগ গিয়েছে বেক্সিমকো কম্পিউটারসের অ্যাকাউন্টে, যা সরাসরি সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।