
শহীদ নূর হোসেন দিবসকে ঘিরে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে (গুলিস্তান) রোববার সারাদিন ছিল টান টান উত্তেজনা। দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ ছাত্র-জনতার ছিল স্লোগানে মুখরিত। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সড়কে নামার সুযোগই দেয়নি জুলাই-আগস্টে গণআন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
শনিবার আওয়ামী লীগ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শহীদ নূর হোসেন দিবস পালনের ঘোষণা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের জিরো পয়েন্টে আসার আহ্বান জানায়। এরপর তাদের প্রতিহত করতে পাল্টা সমাবেশ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বেলা ৩টায় কর্মসূচি পালনের ঘোষণা থাকলেও জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে আওয়ামী লীগের কাউকেই দেখা যায়নি। বরং তাদের বিক্ষোভ মিছিল প্রতিহত করতে ওই এলাকায় অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেন বিএনপি-যুবদল-মহিলা দলসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৮টা থেকেই জিরো পয়েন্ট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। তারা আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন মিছিল করেন। গণজমায়াতের জন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সামনে প্রধান সড়কের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গণহত্যার জন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানান তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার রাত থেকেই অবস্থান নেন বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রোববার সকালে সেখানে বিএনপি, যুবদল ও মহিলা দলের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটের নেতা-কর্মীদের মিছিল ও অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদেরও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়।
অন্যদিকে শনিবার রাত ও রোববার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থক সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
এদিকে শহীদ নূর হোসেন দিবসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে ১৯১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ। বিজিবির পাশাপাশি পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের সারা দেশে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। রাজধানীতে সচিবালয়ের আশপাশে এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রকাশ্যে আসার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
রোববার সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘হিন্দুস্তান বসে হুংকার দেবেন আর গুলিস্তানে সংঘর্ষ করবেন। সেই সুযোগ ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা আপনাদের দেবে না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রাসঙ্গিক কি না; সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে ৫ আগস্ট। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের যত দিন পর্যন্ত না বিচার নিশ্চিত হয়, যত দিন পর্যন্ত ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্ত না হয়, তত দিন পর্যন্ত তাদের প্রকাশ্যে আসার কোনো ধরনের অধিকার নেই।’
এদিকে, জিরো পয়েন্টে উপস্থিত হয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী লীগ সরাসরি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগের আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল। এ দলটির প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতি দেখানো যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, কেন খুনিদের গ্রেপ্তার করছেন না? আপনারা কি আওয়ামী লীগকে ধরতে ভয় পাচ্ছেন? এই দেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে বলব পুলিশ আওয়ামী খুনিদের আটক না করলে, আপনারা এই খুনিদের ধরে পুলিশে দেন।
রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী লীগ আজ গর্তের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এত দিন শেখ মুজিবের ছবি নিয়ে মিছিল করেছে, আর এখন ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিল করার পাঁয়তারা করছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হাতে কি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে? আওয়ামী লীগের কর্মীদের বলতে চাই- আপনারা শেখ হাসিনার ফাঁদে পা দেবেন না।