
সংক্ষিপ্ত বিরতির পর পৃথিবীর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেছে নাসার ৪৭ বছর পুরোনো মহাকাশযান ভয়েজার ১। তবে অবাক করা বিষয় হলো যে, এই যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি। ১৯৮১ সালের রেডিও ট্রান্সমিটার প্রযুক্তির সাহায্যে সংকেত পাঠিয়েছে মহাকাশযানটি।
মহাকাশযানটি পৃথিবী থেকে ১৫ বিলিয়ন বা ১৫ কোটি মাইলেরও বেশি দূরে রয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর একটি রেডিও ট্রান্সমিটারের বন্ধ হওয়ার কারণে সাময়িকভাবে যানটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই বন্ধটি সম্ভবত মহাকাশযানটির ‘ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেম’ এর কারণে হয়েছে। এটি অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহারের সময় কিছু সিস্টেমকে বন্ধ করে দেয়।

গত ২৪ অক্টোবর মহাকাশযানটির সঙ্গে যোগাযোগ পুনরায় স্থাপন করেন নাসার ক্যালিফোর্নিয়ার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) ইঞ্জিনিয়াররা।
নাসার মতে, পৃথিবী থেকে একটি বার্তা ভয়েজার ১–এ পৌঁছাতে প্রায় ২৩ ঘণ্টা সময় লাগে। আবার মহাকাশযানটি থেকে পৃথিবীতে বার্তা আসতেও একই সময় লাগে। গত ১৬ অক্টোবর নাসার ইঞ্জিনিয়াররা মহাকাশযানে একটি নির্দেশ পাঠানোর পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এর প্রতিক্রিয়া শনাক্ত করতে পারেননি তারা। এর একদিন পর ভয়েজার ১ এর সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের পর মহাকাশ সংস্থার দলের সদস্যরা আবিষ্কার করেন যে, ভয়েজার ১-এর ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেমটি মহাকাশযানটির দ্বিতীয়, নিম্ন শক্তির ট্রান্সমিটারে চালু করে।
ভয়েজার ১-এর দুটি রেডিও ট্রান্সমিটার রয়েছে। তবে এটি বছরের পর বছর ধরে শুধু ‘এক্স-ব্যান্ড’ ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে আসছে। তবে মহাকাশযানটির ‘এস-ব্যান্ড’ নামে পরিচিত আরেকটি ট্রান্সমিটার একটি ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং এটি ১৯৮১ সাল থেকে ব্যবহার করা হয়নি।
নাসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ফল্ট প্রোটেকশন সিস্টেমটি কী কারণে সক্রিয় হয়েছিল তা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত এক্স-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার ব্যবহার করবে না তারা। এই কারণ নির্ধারণে কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে।
ভয়েজার মিশনের গ্যারান্টি ম্যানেজার ব্রুস ওয়াগনার বলেন, এক্স-ব্যান্ড চালু করার সঙ্গে কোনো সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা জানতে চান ইঞ্জিনিয়াররা। এ জন্য তারা সতর্কতা অবলম্বন করছেন। গত ২২ অক্টোবর ভয়েজার ১-কে একটি বার্তা পাঠান যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, এস-ব্যান্ড ট্রান্সমিটার কাজ করছে। তবে এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।
ভয়েজার ২ এর পর ভয়েজার ১ উৎক্ষেপণ করা হয়। তবে ভয়েজার ১ ভয়েজার ২-এর পরে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
কিন্তু একটি দ্রুততর রুট ধরে চলতে থাকায় অ্যাস্টেরয়েড বেল্ট (গ্রহাণু বেষ্টনী) থেকে আগে বেরিয়ে যায় ভয়েজার ১। ১৯৭৭ সালে ১৫ ডিসেম্বর ভয়েজার ১ ভয়েজার ২ কে অতিক্রম করে যায়। মহাকাশযানটি মানুষের তৈরি প্রথম বস্তু যা আন্তঃনক্ষত্রীয় মহাকাশে প্রবেশ করেছে।
মহাকাশযানটি প্রথমবারের মতো হেলিওস্ফিয়ারটি অতিক্রম করেছে। যেখানে আমাদের সৌরজগতের সূর্যের প্রভাবের চেয়ে অন্য সৌরজগৎ বা নক্ষত্রের প্রভাব বেশি।
এখন পর্যন্ত ভয়েজার ১ বৃহস্পতির চারপাশে একটি পাতলা রিং এবং দুটি নতুন জোভিয়ান চাঁদ—থেকে এবং মেটিস আবিষ্কার করেছে। এটি স্যাটার্নে পাঁচটি নতুন চাঁদ এবং একটি নতুন রিংও পেয়েছে, যা ‘জি-রিং’ নামে পরিচিত।