নিষিদ্ধ পলিথিন ও পলিথিন জাতীয় ব্যাগ অবাধে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এমন অবস্থায় আগামী রবিবার থেকে বাজারে অভিযান চালানো হবে। এতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকার বার্তা দিতে চাইছে যে এবার পলিথিন বন্ধে আর ছাড় দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে যদি দ্রুত পলিথিনের বিকল্প তৈরি করা যায় তাহলে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করা সহজ হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত ৯ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না। বিকল্প হিসেবে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের দিতে হবে। সুপারশপগুলো সরকারের ওই নির্দেশনা মেনে চলছে।
একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ১ নভেম্বর থেকে খুচরা বাজারেও এসব ব্যাগ ব্যবহার নিষেধ। সেই ঘোষণা অনুযায়ী খুচরা বাজারে পলিথিন ব্যাগ বন্ধের চেষ্টা করছে সরকার। তবে এই নির্দেশনা সুপারশপে কার্যকর হলেও ঘোষণার প্রথম দিন রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, কারওয়ান বাজার, লালবাগ, গুলশান-২ এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের মতোই বিক্রি হচ্ছে পলিথিন। অনেকে দোকানে লুকিয়ে রেখেছেন, কেউবা আবার প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন।
ছোট, বড় বা মাঝারি দোকানের অনেকেই পলিথিন নিষিদ্ধের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না।
লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকার বেশির ভাগ দোকানের সামনেই আগের মতো বিভিন্ন ‘স্যাম্পল’ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো দেখে গোডাউন থেকে বেশি পরিমাণ পলিথিন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দোকানিরা। নবাবগঞ্জের এক বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটাই তো আমাদের ব্যবসা, আমরা কী করব? যেসব মাল স্টকে আছে সেগুলো তো আগে শেষ করতে হবে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
ঢাকার অন্যতম বড় পাইকারি ও খুচরা বাজার কারওয়ান বাজার। এই বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবাই পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিনের (টিস্যু ব্যাগ হিসেবে পরিচিত) ব্যাগ বিক্রি করছেন। এই বাজারের ফল বিক্রেতা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার যদি পলিথিন বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরাও কাগজের ঠোঙা দিয়ে বিক্রি করতে পারব। এখনো পাইকারি পলিথিন বিক্রি হচ্ছে। মেইন কথা হচ্ছে, কারখানায় পলিথিন তৈরি বন্ধ না করতে পারলে এটা বাজারে এসে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা যাবে না।’
কারওয়ান বাজারের একজন পাইকারি বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তাঁর এখান থেকেই ৭০-৮০ কেজি পলিথিন বিক্রি হয়। এসব নেন হোটেল মালিক, হাসপাতাল ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা। ছোট হাসপাতাল থেকে শুরু করে বড় হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকেও পলিথিন প্যাক দিয়ে রোগীদের সুপ ও হালকা খাবার সরবরাহ করে।
গুলশান এলাকার কালাচাঁদপুর বৌবাজারে বাজার করতে আসা অসীম ডেভিড এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এটা কতটুকু কার্যকর হবে সেই প্রশ্ন এসে যায়। এর আগে অনেক সরকার পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু আবারও পলিথিন বাজারে এসে গেছে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ না করলে আবারও পলিথিন ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।’
পলিথিন বন্ধে অভিযান
পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের গঠিত কমিটি গতকাল শুক্রবার বাজার মনিটরিং করেছে। এদিন সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও আশপাশের বিভিন্ন সুপারশপে তারা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করে।
মনিটরিং কমিটির সদস্যরা বাজার করতে আসা মানুষকে পলিথিন ব্যবহার না করে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে দোকানিদের পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তী অভিযানে পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয় গঠিত মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ) তপন কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় ৩ নভেম্বর থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
।। প্রকাশক ও সম্পাদক : মো: শিহাব উদ্দিন ।। নির্বাহী সম্পাদক : জি.এস. জয় ।।
দৈনিক জন জাগরণ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@২০২৫You cannot copy content of this page